রাজধানীর কুড়িল-রামপুরা সড়কের জগন্নাথপুরে রাস্তার পাশে চায়ের টং দোকান মো. এমরান হোসাইনের। হালকা পাতলা গড়নের এ চা দোকানির বয়স ২৫ এর কোঠায়।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দিবাগত রাত দুইটায় দোকান করার কারণসহ শোনালেন তার ছোট্ট জীবনের ইতিহাস।
মুচকি হেসে অল্প কথায় এমরান বললেন, ‘ছোট বেলায় খুব দুষ্ট ছিলাম। পড়ালেখা করতাম না। কৃষক বাবা কি আর করবেন। কিছুদিন রাজমিস্ত্রীর হেলপারি করেছি। তারপর দীর্ঘদিন হোটেলে কাজ করেছি’ ।
কিন্তু সংসার আর চলেনা। ২০০৯ সালে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পাড়ি দেওয়ার কিছু সময় পরে তার বাবা মারা যান। সংসারের বড় ছেলে হিসেবে ছোট ভাই-বোনের দায়িত্ব নিতে হয়েছে নিজ ঘাড়ে। সঙ্গে বিধবা মায়েরও। হেলপার কিংবা হোটেলে চাকরি করে আর সংসার চলে না। দীর্ঘ চেষ্টার পর একটি পানের বাক্স নিয়ে জগন্নাথপুরের মেইনরোডের ফুটপাতে বসে পড়েন এমরান।
কিন্তু দিনের বেলায় তেমন বিক্রি হয় না। কারণ আশে পাশের বড় বড় দোকান আছে। কুলিং কর্ণার আছে। মানুষ কেন ফুটপাতে চা খাবে, প্রশ্ন এমরানের। তাই রাত থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত দোকান করেন। আর এতেই বাজিমাত। প্রতিরাতে অনেক বেচাকেনা হয়।
প্রতিরাতে নির্ঘুম থাকা অনেক কষ্টের। প্রশ্ন শেষ না হতেই এমরানের পাল্টা জবাব। গরিবের ঘরে জন্ম। রাত আর দিন কিসের। পেটের দায়ে নিশিরাতে ব্যবসা করতে হয়। কিছু করার নেই। গ্রামে থাকা ভাই-বোন আর মায়ের চিন্তায় এটা করতেই হবে। মেসে থাকি। এখনো বিয়ে করিনি।
কাস্টমারদের বর্ণনা দিতে গিয়ে এমরান বলেন, এটা মেইন রোড। রাতভর মানুষের যাতায়াত। গাড়ি থামিয়ে চা-পানি খান। আশে পাশের মেসের ছেলেরা আসেন। রিকশা আর সিএনজি চালকতো আছেই।
এমরান বলেন, রাতে অনেক কাস্টমার। কোনো বাকীও নেই। সবাই নগদ খায়, নগদ টাকা দেয়। চা, সিগারেট, ডিম, কলা, পাউরুটি অনেক বেশি চলে। আর এতেই অনেক লাভও হয়। ভালই আছি। ভালই সংসার চলছে। তবে একটা সমস্যা আছে। একটু উৎকোচ দিতে হয়। এই আর কি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪,২০১৭
ইএস/বিএস