২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আশুলিয়ার নিশ্চিতপুর তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনে আগুন লাগে। আগুনে পুড়ে ছাই হন ১১৩ শ্রমিক।
দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন অনেকে। তারা চাইছেন সবকিছু ভুলে নতুন করে কাজে যোগ দিতে। কিন্তু তাদের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন বিপত্তি। কাজের সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলছে না চাকরি। আবার মিললেও দুর্বল বা অন্য কোনো কারণ দেখিয়ে বাধ্য করা হয় চাকরি ছাড়তে।
সমস্যা একটাই, তারা ছিলেন পুড়ে যাওয়া তাজরীনের শ্রমিক। তাদের সাহায্য করা হলেও পুনর্বাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেউ।
তাজরীন ফ্যাশনের আহত শ্রমিক সুবিদা রানী। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে কোনো রকম সুস্থ হয়েছেন। তবু আগের মতো ভারি কাজ করতে পারেন না। তারপরও অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে আবার কাজ করতে চান। কিন্তু অনেক ঘুরেও কোথাও কাজ পাচ্ছেন না।
কথা হয় সুবিদা রানীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, সাড়ে তিন বছর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছিলেন। ওই সময়ে কিছু সাহায্য পেলেও তা চিকিৎসা করাতেই শেষ হয়ে গেছে। এখন সন্তানদের নিয়ে কোনো রকম দিন কাটছে তার। তাই কাজে ফেরা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু তার মতো অনেকেই এখন আর কোথাও চাকরি পাচ্ছেন না। তাজরীনে কাজ করার কথা শুনলেই তাদের কাজে নিতে আর আগ্রহ দেখায় না কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ, মনে করে তারা প্রতিবন্ধী, অক্ষম।
রেবেকাও আহত হয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়। তাজরীনের সাবেক এ শ্রমিক বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কোনো কারখানায় আয়ার কাজ নিতে। একটি জায়গায় চাকরি হয়েছিল, কিন্তু বেশি দিন চাকরি করা সম্ভব হয়নি। কাজে একটু সমস্যা হলেই বিভিন্ন কটূক্তি করা হতো। তাই বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে আসতে হয়েছে তাকে। এরপর আর কোনো কারখানায় চাকরি হয়নি।
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের আঞ্চলিক শাখার সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, তাজরীনের শ্রমিকদের অনেকে এখনো অসুস্থ। তাদের কাজ করার ক্ষমতাও আগের মতো নেই। তাছাড়া দীর্ঘদিন কাজের বাইরে থাকায় কারখানা মালিকরা তাদের চাকরি দিতে আগ্রহ দেখায় না।
তিনি আরো বলেন, যারা মারা গেছেন এবং এখনো যারা সুস্থ হননি তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা করা, যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তাদের পুনর্বাসন ও তাদের জন্য কারখানাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে চাকরি দেওয়াসহ বেশকিছু দাবি নিয়ে কাজ করছি আমরা। অনেক কারখানা মালিক ও প্রশাসনের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে সবকিছু ভুলে আহত শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে নতুন করে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাজরীন ফ্যাশনের নিচ তলায় তুলার গোডাউনে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পাঁচতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার ভেতরে তখনও কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাদের ভেতরে আটকে রেখে পালিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। এতে আগুনে পুড়ে প্রথমে ১১০ জন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো তিনজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া প্রাণ বাঁচাতে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন দেড় শতাধিক শ্রমিক। এ ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন সেই সময়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
আরবি/এসআই