সাধারণ মানুষ বলছে, তাদের আয় বাড়েনি, কিন্তু সংসারের নানান খরচের সঙ্গে একের পর এক যোগ হচ্ছে বাড়তি খরচ। অতিরিক্ত এই খরচের টাকা কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা।
রাজধানীর বাড়িওয়ালারা সাধারণত বছরের শুরুতে একবার বাড়ি ভাড়া বাড়ান। আর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার তাদের ভাড়া বাড়ানোর আরো ‘সুযোগ তৈরি’ করে দিলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, রাজধানীতে ২০১৬ সালে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর গত ২৫ বছরে বেড়েছে প্রায় ৩৮৮ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষিত আদেশ অনুযায়ী, সারা দেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতি ইউনিটে গড়ে ৩৫ পয়সা। ১ ডিসেম্বর থেকে এই বাড়তি দাম কার্যকর হবে। গ্রাহকদের জানুয়ারি মাস থেকে বর্ধিত বিল দিতে হবে।
একাধিক ভাড়াটিয়া বলেন, ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুতের দাম বেশি দিতে হলে জানুয়ারিতে বাড়ি ভাড়া বাড়াবেন। যদিও বছরের শুরুতে বাড়ি ভাড়া বাড়ানো অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার তো অজুহাত পেলো। আমাদের কিছু বলার থাকবে না। কারণ রাজধানীর আবাসন সংকটে আমরা তো বাড়ির মালিকদের হাতে জিম্মি।
মিরপুরের বাসিন্দা ভাড়াটিয়া আনিস আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বছরজুড়ে চলছে জিনিসের দাম বৃদ্ধির উৎসব। আজ চাল তো কাল পিঁয়াজ- সব জিনিসের দাম রীতিমতো আয়ত্বের বাইরে। এই সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দিলো। যারা বছরের শুরুতে বাড়ি ভাড়া বাড়াতো না তারাও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে। বিদ্যুতের দাম যদি ১০০ টাকা বাড়ে বাড়িওয়ালা বাড়াবেন এক হাজার টাকা। এসব দেখার তো কেউ নেই। কষ্ট শুধু সাধারণ মানুষের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এ এলাকার আরেক বাসিন্দা নোমান বলেন, সরকারের পক্ষে বলা হয় মানুষের আয় বেড়েছে। বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। সরকারি চাকরিজীবীদের আয় বাড়লেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের আয় তো বাড়েনি। হিমশিম খেতে হয় বাজার করতে গিয়ে। মাস শেষে কোনো টাকা সঞ্চয় করতে পারি না। এর মধ্যে আবার বাড়ি ভাড়ার বাড়তি বোঝা টানতে হবে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় বাড়ির মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন। মিরপুর-১০ নম্বরের একজন বাড়ির মালিক আম্বিয়া খাতুন বলেন, যেহেতু বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, আমাদেরও তো ব্যালান্স করতে হবে। এজন্য ভাড়া বাড়তেই পারে। আমি প্রতিবছর বছর ৫০০ টাকা বাড়াই। এবার ভাবতে হবে কত টাকা বাড়াবো।
ফার্মগেটের মুদি দোকানদার মো. খায়রুল বলেন, আমার বাড়িওয়ালা ৫শ টাকায় ভাড়া বাড়ায়। এবার আগেই বলেছেন এক হাজার বাড়াবেন। সব ভাড়াটিয়ারা মালিককে অনুরোধ করবো ভেবেছি। এখন তো উনি কথা শুনবেন না। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ভাড়া বাড়াবেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে আটবার বিদ্যুতের দাম বাড়লো। এর কুপ্রভাব বাড়ি ভাড়ায় পড়বে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা জনজীবনে দুঃসহ যন্ত্রণা বয়ে আনবে।
ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণে কর্মরত কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সব কিছুতেই প্রভাব পড়বে। কারণ, বিদ্যুতের সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত। বছরের শুরুতে বাড়িওয়ালারা সাধারণত ভাড়া বাড়ান, এখন আরো বেশি বাড়ানোর সুযোগ পেলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
এমসি/এএ