বাগেরহাটে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকেলেও গ্রাহকদের জমা টাকা ফেরত দিচ্ছে না ব্যাংকটি। টাকা ফেরত চাইলে তাদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সালে বাগেরহাট শহরের সাধনার মোড়ে সফি মার্কেটের তিনতলা ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড। এরপর থেকে বাগেরহাটের জনগণকে বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখিয়ে চলতে থাকে তাদের টাকা সংগ্রহ।
পিরোজপুর জেলার শিকারপুর গ্রামের মো.মোশারফ হোসেন চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি সমবায় থেকে নিবন্ধন পায়। যার নিবন্ধন নং ৭১০। বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় তাদের ৩৪টি শাখা রয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ লিমিটেডের ৩০/৩৫ জন গ্রাহক বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন। এরা একেকজন ৫০ হাজার থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত টাকা জমা রেখেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক বাগেরহাট শহরের পত্রিকা ব্যবসায়ী মোকাদ্দেস আলী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগে বাগেরহাটে বিভিন্ন আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের প্রলুদ্ধ করে টাকা সঞ্চয়ের জন্য প্রচারণা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এক লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে দুই হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেয় তারা।
তাদের ফাঁদে পা দেয় বাগেরহাটের কয়েকশ’ গ্রাহক। ২০১৬ সালের প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনুমোদিত না বুঝতে পেরে গ্রাহকরা জমা রাখা টাকা ফেরত চাইতে শুরু করে। তখন প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন ব্যবস্থাপক নিহার রঞ্জন হালদার এলাকা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। পরে টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি। তখন বাসুদেব দে নামে এক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন ব্যবস্থাপক নিহার রঞ্জন হালদারকে ভারত থেকে ধরে এনে বাগেরহাট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। তবে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়
সম্প্রতি মো. স্বাধীন নামে এক কর্মচারী বাগেরহাটের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব নিয়েছেন। শহরের সাধনার মোড় থেকে অফিস পরিবর্তন করে দশানী এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে কর্মকর্তারা বলছেন আগের ব্যবস্থাপক টাকা নিয়ে চলে গেছেন। আমরা তোমাদের কোনো টাকা ফেরত দিতে পারব না। এ নিয়ে মামলা বা বাড়াবাড়ি না করতে হুমকিও দেন তারা।
দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডের বাগেরহাট শাখা ব্যবস্থাপক মো.স্বাধীন বলেন, প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন ব্যবস্থাপক নিহার রঞ্জন হালদার তিন শতাধিক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন। তা আমাদের এখানে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। তিনি ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার হিসাব দেননি। টাকার হিসাব চাইলে তিনি আগস্টে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি লাপাত্তা। চলতি বছরের ২৯ মার্চ থেকে ২১৫ জন গ্রাহককে অন্তত ১৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছ পর্যায়ক্রমে অন্যদের টাকাও ফেরত দিতে কাজ করছি।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে (০১৭৬৪৬৮৮৪৮৪) যোগাযোগ করলে এক নারী তার ফোনটি রিসিভ করেন। সাংবাদিক পরিচয় দিলেই তিনি ফোনটি কেটে দেন।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, অর্থ লগ্নিকারী কোনো প্রতিষ্ঠান বৈধ অনুমতি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা আমার কাছে এলে আমি তাদের আইনি সহায়তা দেব।
বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুন বাংলানিউজকে বলেন, তাদের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে অবৈধ ব্যাংকিং চালালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭
আরএ