ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘নির্ভুল স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রই আমার যুদ্ধ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
‘নির্ভুল স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রই আমার যুদ্ধ’ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: একজন অশীতিপর বৃদ্ধ এলেন আমার অফিসে। তার প্রথম কথা, আমি তো মরে গেছি, আমাকে জীবিত করে দিন।

আরে বলেন কি! আপনি তো জীবিতই!

এই দেখেন,আমি মৃত।

আমার সহায় সম্পত্তি গ্রাস করতে তিন ছেলে মিলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে সেখানে আমার নামের আগে মৃত শব্দ বসিয়ে দিয়েছে।

বেঁচে থেকেও আজ আমাকে আপনারা মেরে ফেলেছেন!

কাগজপত্র ঘেঁটে দেখলাম,সত্যিই। জীবিত থেকেও আজ তিনি মৃত।

এভাবে তাকে মৃত সাজিয়ে তার সহায়-সম্পদ সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে নি:স্ব করে দিয়েছে তিন সন্তান। এটাই বাস্তবতা।

আর সেই বাস্তবতায় নাগরিকদের মাঝে নির্ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেয়াটাই আমার যুদ্ধ। বলতে পারেন, আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলানিউজের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।


সাভারে গত ২২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন আয়োজিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করতে যান তিনি। সেখানেই তার সঙ্গে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কথা হয় বাংলানিউজের।

এ সময় প্রশ্ন করা হয়, আপনার বক্তব্যেই জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাকে ঘিরে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম, হয়রানি, আর্থিক দুর্নীতি স্পষ্ট। এমন কি এই দপ্তরের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অভিযোগ ও সুপারিশ পাঠানো হয়েছে আপনাদের কাছে। সব মিলিয়ে দায় তো আপনার লোকদেরই।

জবাবে তিনি বলেন, অস্বীকার করছি না। সে জন্যেই তো বলেছি, এটা আমার চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে আমাদের নীতি 'জিরো টলারেন্স'।

আমরা আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছি। অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় নয়। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, দালালের কারণে আমাদের অর্জনকে ভেস্তে দিতে পারি না। দেয়া যায় না।

যে কোনো মূল্যে এনআইডির সঠিকতা ও শুদ্ধতা নিশ্চিতে আমরা বদ্ধ পরিকর। কারণ এনআইডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা ছাড়া ভবিষ্যতে কোন সেবা মিলবে না। তাই এটা নিয়ে কোন অনিয়ম বা জালিয়াতি সহ্য করা হবে না। ইতিমধ্যে জালিয়াতিতে জড়িত আমাদের দপ্তরের দুজনকে আমি ধরেছি। আটক করে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছি।

দেশে তালিকাভুক্ত ১০ কোটি ১৮ লাখেরও বেশি ভোটার। যোগ হচ্ছে আরও অন্তত ৩৫ লাখ নতুন ভোটার। আবার জানুয়ারিতে হালনাগাদ বিদ্যমান তালিকা থেকে বাদ পড়ার কথা রয়েছে মৃত ১৩ লাখেরও বেশি ভোটারের। এরই মাঝে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার কথা ছিলো কমিশনের। রোডম্যাপ ধরে সময়মতো কাজগুলো করার সক্ষমতা নিয়ে তো উঁকি দিচ্ছে সন্দেহ আর সংশয়!

আসলে স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ কিন্তু অনেক কঠিন কাজ। তবে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কিন্তু  ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। চ্যালেঞ্জ নিয়েই কিন্তু আমরা নেমেছি।

স্মার্ট কার্ড বিতরণের লক্ষ্যে যে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিলো তার অবস্থা তো একটি জায়গায় এসে মুখ থুবড়ে পড়লো!

এর দায় ফরাসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলজিসের (ওটি)। তারা ব্যর্থ ছিলো বলেই আমরা আর তাদের সাথে আগাইনি। তাদের মেয়াদ বাড়াইনি। তবে এ কাজটি যাতে থেমে না থাকে, সেটা ছিলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ফ্রান্সকে আমরা দেখিয়ে দিতে পেরেছি যে, আমরাও পারি। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে প্রকল্পে গতি আনতে আমরা দেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা করেছি। এতে যেমন কাজের গুণগত মান বেড়েছে, তেমনি খরচও অনেক সাশ্রয় হয়েছে। বলতে পারেন আমরা সফল।

এ প্রর্যায়ে প্রশ্ন করা হয়, মোবাইল ফোনের সিম বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করতে গিয়ে ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস যেখানে ঠেকানো যায়নি, সেখানে দেশি সংস্থার মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড তৈরিতে ব্যক্তিগত সংবেদনশীল তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নিশ্চয়তা কতটুকু?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, কোনো শংকা নেই। আমরা এমন একটা জাতি। আমরা সবই পারি এবং প্রমাণ করতেও সক্ষম হয়েছি। নিজেদের লোকদের দক্ষতা বাড়াতে আমরা তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

কিন্তু ফরাসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলজিসের (ওটি) সাথে চুক্তি নবায়ন না করে বরং দেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা, ঝুঁকি মনে করেন নি?

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, একদিকে অত্যন্ত ঝুঁকি, অন্যদিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ। স্বাভাবিকভাবেই ফ্রান্স বিষয়টি ভালো চোখে নেয়নি। নানা চাপ মোকাবেলা করতে হয়েছে আমাকে। তাদের (ফরাসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলজিস) বাদ দিয়ে নিজেরাই যখন তা শুরু করলাম তা একদিকে যেমন ছিলো ঝুঁকির, অন্যদিকে ছিলো কঠিন চ্যালেঞ্জের। আমার বিশ্বাস আর সাহস ছিলো। আমরা পারবো। এবং তা করেও দেখিয়েছি। স্মার্ট কার্ড দেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে সম্পূর্ণ গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে দেশেই স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও বিতরণ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।