ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্নীতিবাজরা যেনো ক্ষমতায় আসতে না পারে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
দুর্নীতিবাজরা যেনো ক্ষমতায় আসতে না পারে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজকার-আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও ইতিহাস বিকৃতিকারীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। আগামীর বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিক মুক্তির ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ। যা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণেই বলা আছে। 

শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেওয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

 

সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা বলেন, রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, দুর্নীতিবাজ এবং ইতিহাস বিকৃতিকারীরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য খেয়াল রাখতে হবে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।  

তিনি বলেন, সমাবেশে আগামী প্রজন্মের অনেক ছেলে-মেয়ে এখানে উপস্থিত রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা তাদের জানতে হবে বুঝতে হবে, অনুধাবন করতে হবে। কেননা এই ভাষণেই বলা আছে ভবিষ্যত বাংলাদেশ কেমন হবে।  

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর এই ভাষণকে নিষিদ্ধ করা হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারেনি। যারা এই ভাষণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো, তাদের অবস্থা আজ কী? তারা এখন কোথায় মুখ লুকাবে? 

সব পথ যেনো মিশেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।  ছবি: ডিএইচ বাদল/বাংলানিউজ‘কিন্তু ইতিহাস কখনও মুছে ফেলা যায় না। ইউনেস্কোর এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ’ 

এর আগে বিকেল ৩টার কিছু আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ স্থলে পৌঁছান শেখ হাসিনা। পরে তিনটায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।  

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।  

বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানো হয়। এরপর ‘ধন্য মুজিব ধন্য’ গানটির সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

নির্মেলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা শব্দটি’ আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্ধ্যোপাধ্যায়। এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর দীপা খন্দকারের পরিচালনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাঙিয়ে দিয়ে যা’ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘তোরা সব জয় ধ্বনি কর’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

কামাল চৌধুরীর (কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী) লেখা ‘মার্চ থেকে’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন আহকাম উল্লাহ।

এ সময় পূর্ব দিগন্তে...,  স্বাধীন স্বাধীন…,  বিজয় নিশান উড়ছে ঐ…,  শোন একটি মুজিবরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ শুনি, মুজিবর আছে বাংলার ঘরে ঘরে, সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম মুজিবুর এই গানগুলোর সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা।

এরপর জনপ্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা’র গান দু’টি পরিবেশন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গুন গুন করে গাইতেও দেখা যায়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সব শেষে পরিবেশন করা হয় ‘নাও ছাড়িয়া দে’, ‘পাল উড়াইয়া দে’ গানের সঙ্গে চলে সমবেত নৃত্য।

এর আগে দুপুরে ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এই উদযাপন শুরু হয়।

প্রথমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মূখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকসহ সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শুরু হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শোভাযাত্রার সামনে ছিলো হাতি আর ঘোড়ার গাড়ি, এরপর ট্রাক।  

এরপর একে একে জনপ্রশাসনের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, বিআইডব্লিউটিসি, পর্যটন করপোরেশন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

তাদের হাতে থাকা ব্যানার-ফেস্টুনেও লেখা ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিভিন্ন অংশ। কারও মাথায় থাকা লাল-সবুজের রঙে টুপিতেও ছিল ভাষণের অংশ।  

এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহর থেকে শুরু করে তৃণমূলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।  

জানা গেছে, সন্ধ্যার পর পরিবেশন করা হবে ইতিহাস ভিত্তিক লেজার শো ও আতস বাজি উৎসব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭/আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা/ আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা
এসকে/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।