ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্বীকৃতির উদযাপনে লাখো মানুষের ঢল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্বীকৃতির উদযাপনে লাখো মানুষের ঢল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদযাপনে যোগ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখি হাজারো মানুষের কাফেলার একাংশ: ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

ঢাকা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়াকে সরকারিভাবে উদযাপন করা হলো। ১৯৭১ সালে যে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিরায়ত ভাষণটি দিয়েছিলেন, উদযাপনের ভেন্যু হিসেবেও সেই ময়দানটিকেই বেছে নেওয়া হলো। আর একে ঘিরে লাখো মানুষ হয়ে ওঠে আনন্দে উদ্বেল।

শনিবার আনন্দ শোভাযত্রা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করা হলো এই স্বীকৃতি প্রাপ্তিকে। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের আয়োজনে এবং লাখ মানুষের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার, বিজিবি, সংস্কৃতিকর্মী, আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।

বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠানমুখি মানুষের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর মৎস্যভবন,রমনা পার্ক,শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্টসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে।

দুপুরের পর থেকেই গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাল-সবুজ পতাকায়, পোশাকে ছেয়ে যায়। লাল-সবুজ পোশাক পরে, হাতে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা আর বহুবর্ণিল প্লাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে উদ্যানে সমবেত হতে থাকেন লাখ লাখ মানুষ। মানুষের এই ঢলকে জনসমুদ্র বললে ভুল হবে না।

সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। বেলা ১২টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সেখান থেকে বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। এ শোভাযাত্রায় স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ ঢাক, ঢোল,বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তাতে শরিক হতে থাকেন। শোভাযাত্রাটি কলাবাগান, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে মিলিত হয়।

এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একের পর এক শোভাযাত্রা আসতে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে।

মঞ্চে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এরপর বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিকেল ৩ টা ২০ মিনিটে এই স্থানেই মানবেতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও উদ্দীপক ভাষণটি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (পরে যিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙ্গালির অভিধায় ভূষিত)। ঠিক সেই একই সময় ৩টা ২০ মিনিটে এ অনুষ্ঠানে বাজানো হয় জাতির পিতার ঐতিহাসিক সেই ভাষণটির রেকর্ড। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ ইতিপূর্বে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে রঙিন ভার্সনে রূপান্তর করেছে। এ সময় রঙ্গিন ভাষণটিরও ভিডিও চালানো হয়।   

উদ্যানের গ্লাস টাওয়ারেরর পাশে তৈরি করা মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মূখ্য সচিবগণ। মঞ্চের সামনে মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা,ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা অবস্থান নেন।

 অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুতনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আবেগদীপ্ত ভাষণে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর এই ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। সত্য সব সময় চিরভাস্বর। এই ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় সেটাই প্রমাণ হয়েছে।

এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে লেখা কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা আবৃত্তি করেন ভাস্কর বন্দোপ্যাধ্যায়। অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে বরেণ্য সংগীত শিল্পি সাবিনা ইয়াসমিন সংগীত পরিবেশন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘন্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭

এসকে/এমইউএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।