ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সুগন্ধি চালের পিঠার ঘ্রাণে মুগ্ধ পথচারীরা

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
সুগন্ধি চালের পিঠার ঘ্রাণে মুগ্ধ পথচারীরা সুগন্ধি চালের পিঠার ঘ্রাণ মুগ্ধ করছে পথচারীদের

দিনাজপুর: চারপাশে বইছে শীতল হাওয়া। সকালের সূর্য মামা পশ্চিম দিগন্তে হেলে প্রায় নিস্তেজ। এমন সময় ভ্যান বোঝাই করে মালামাল নিয়ে এলেন নাজমা খাতুন। গুছিয়ে দোকান সাজাতে সাজাতেই সন্ধ্যা হয়ে এলো।

আগে থেকেই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতা ফারুক হোসেন ও তার মেয়ে। এরই মধ্যে চুলায় আগুন জ্বালিয়ে পিঠা তৈরি করতে শুরু করলেন নাজমা।

অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো ফারুকের। পিঠা সিদ্ধ হতে শুরু হওয়ার সাথে সাথেই যেন চারপাশে ছড়িয়ে পড়লো সুগন্ধ।  

পথচারীরা পিঠার সুগন্ধে মুগ্ধ হয়ে দোকানের সামনে থামছেন পিঠা খেতে। এভাবেই পথচারীদের মুগ্ধ করছে সুগন্ধি চালের পিঠার ঘ্রাণ। অনেকে বাসায় নেয়ার জন্য পার্সেলের অর্ডার দিয়েও অপেক্ষা করছেন।  

শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে দিনাজপুর শহরের নিমতলা মন্দির বটগাছ তলায় গিয়ে দেখা গেল এমন দৃশ্য।

নিমলতা মন্দিরের বটগাছ তলায় এ রকম নাজমা খাতুনের মতোই সুগন্ধি চালের পিঠার দোকান বসিয়েছে নাছিমা, রহিমা, বাবুল, আকবরেরা।  

শীত আসলেই এখানে সারিবদ্ধ ভাবে বসে সুগন্ধি চালের চিতই ও ভাপা পিঠার দোকান। বিকেল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে সুগন্ধি চালের পিঠা পাওয়া যায়। এছাড়া এখানকার বিশেষ আকর্ষণ ডিম চিতই পিঠা।  
শীত আসলেই এখানকার বিশেষ আকর্ষণ ডিম চিতই পিঠাদিনাজপুর শহরের রামনগর এলাকার মোবাইল ব্যবসায়ী মো. ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন বিকেলে বালুবাড়ীতে প্রাইভেট থেকে একমাত্র মেয়ে স্নেহাকে (১২) নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় সুগন্ধি চালের পিঠার ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে। আজ বাড়ি ফেরার সময় মেয়ে বাসায় নেয়ার জন্য ৫টি ভাপা পিঠা কিনে দেওয়ার বায়না ধরে। মেয়ের বায়না পূরণ করার জন্য পিঠার দোকানে দাঁড়াই। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পিঠা পেয়ে মেয়ে খুবই খুশি।

পার্শ্ববর্তী বিরল উপজেলা থেকে আগত নয়ন নামের অপর একজন পিঠা ক্রেতা বলেন, এখানে অপেক্ষা করে হলেও পিঠা পাওয়ার পর অপেক্ষার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সুগন্ধি চালের পিঠা খেতে খুবই সুস্বাদু। বাড়িতে এই পিঠা নিয়ে সন্ধ্যায় নাস্তার টেবিলে পরিবেশন করলে সকলে আনন্দিত হয়। এখানকার সুগন্ধি চিতই পিঠার সাথে ডিম দিয়ে ডিম চিতই খাওয়ার মজাটাই একটু আলাদা।  
প্রতি পিস ভাপা পিঠা ১০ টাকা, চিতই ৫ টাকা ও ডিম চিতই ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছেকথা হয় পিঠা ব্যবসায়ী নাজমার সাথে। তিনি জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমে দিনাজপুরের বিখ্যাত সুগন্ধি চালের আটা দিয়ে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি। গত বছরের তুলনায় এবার চালের দাম বেশি হলেও পূর্বের দামেই পিঠা বিক্রি করছেন তিনি। প্রতি পিস ভাপা পিঠা ১০ টাকা, চিতই পিঠা ৫ টাকা ও ডিম চিতই ১৫ টাকা করে বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে গরম গরম পিঠা পাওয়া যায়। দিনে গড়ে প্রায় দেড় মণ সুগন্ধি চালের আটার পিঠা বিক্রি হয়। এখানকার সুগন্ধি চালের পিঠা কিনতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষেরা ছুটে আসে। বর্তমানে একটি চিতই পিঠা বানাতে ৩ টাকা ও ভাপা পিঠা বানাতে ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকা খরচ হয়। পিঠার দোকান করেই তার ৪ সদস্যের সংসার চলে। এই আয়ের মধ্যেই সন্তানদের পড়াশোনারও খরচও বহন করতে হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।