রোববার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘মানুষ ও শান্তির জন্য কূটনীতি’ শীর্ষক ৩ দিনব্যাপী ‘দূত সম্মেলন'- এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তাগিদ দেন তিনি।
প্রথমবারের মতো বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও স্থায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে এ দূত সম্মেলনের আয়োজন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অনেকে বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, সাজা হয়েছে, হচ্ছে। পঁচাত্তরের পর তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। তারা বসে নেই। তারা বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছেন, অপপ্রচার চালাচ্ছেন’।
বিদেশে পালিয়ে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ওই খুনিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তারা পরিকল্পিতভাবে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। অপপ্রচার করে তারা যেন দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারেন, সেদিকে দৃষ্টি দেবেন। যেটা সঠিক সেটা তুলে ধরবেন’।
বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা, দেশে আরো বিনিয়োগ আনা, নতুন রফতানি বাজার সৃষ্টি, জনশক্তি রফতানি বাড়ানো এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতেও রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রবাসীদের কল্যাণে ও দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে কাজ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশে আপনারা একেকজন একেকটি বাংলাদেশ। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন কোনো রকম হয় হয়রানির শিকার না হন, তাদের ভালো-মন্দ দেখবেন। তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন’।
সপ্তাহে কিংবা মাসে একবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বসে তাদের সমস্যার কথা শোনা এবং সমাধান করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে সম্প্রতি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের করা সমঝোতা চুক্তিকে বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী এ ইস্যুতে বিশ্নের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশের পাশে থাকা এবং সহযোগিতার কথাও তুলে ধরেন।
দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি বৈশ্বিক চাপের কারণে এ সফলতা এসেছে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টিতে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক চাপেরও প্রয়োজন রয়েছে।
বিশ্ব জনমত গঠনে তাদেরকে আরো ভূমিকা রাখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা ও বৈশ্বিক চাপে মিয়ানমারের নাগরিকদের দ্রুত সেদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে কূটনীতিকদের তৎপর হওয়ারও পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির এই মূলমন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমতার ভিত্তিতে, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে নয়’।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশের অগ্রগতি ও বিশ্বসভায় সম্মান বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশকে কেউ করুণার চোখে দেখে না। সবাই সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারাও উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
এমইউএম/এএসআর