ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সেনাবাহিনীর সম্মানে আপ্লুত মুক্তিযোদ্ধা ও স্বজনরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
সেনাবাহিনীর সম্মানে আপ্লুত মুক্তিযোদ্ধা ও স্বজনরা বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামালের বৃদ্ধা মা মালেকা বেগম সম্মাননা নেওয়ার সময় সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের গালে স্নেহের চুম্বন এঁকে দেন ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: সশস্ত্র দিবস উপলক্ষে সেনাবাহিনীর দেওয়া সম্মাননা পেয়ে আবেগাপ্লুত খেতাবধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। প্রতিবছর এই সম্মাননা তাদের গর্বিত করে। তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের দু:সাহসিক স্মৃতিঘেরা দিনগুলোতে। 

রোববার (২৬ নভেম্বর)  ঢাকা সেনানিবাসে 'সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০১৭’ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য খেতাবপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের সংবর্ধনা দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদের মধ্যে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকই বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কেউ হুইল চেয়ারে বসে, কেউ কেউ নাতি-নাতনীর হাত ধরে এসেছেন। বীরশ্রেষ্ঠ ও পরলোকগত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনরা এসেছেন সংবর্ধনা নিতে।  

জীবন সায়াহ্নে এসে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমন সম্মান পেয়ে আপ্লুত জীবিত এই  বীর যোদ্ধারা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য জীবিত বীর  মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে করমর্দনরত সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক; ছবি: জিএম মুজিবুর
নাতির সঙ্গে সংবর্ধনা নিতে এসেছেন মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম ক্যাপ্টেন নুরুল আমীন। আশির উপরে বয়স; সামান্য জার্নির ধকলও শরীরে সহ্য হয় না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে জানলে আর বসে থাকেন না। প্রতিবারই ভাবেন এবারেই মনে হয় নিজ হাতে শেষ সম্মান হাতে নেওয়া! তাই শেষবারের সুযোগ মনে করে তা আর হাতছাড়া করতে চান না। তাই প্রতিবারের মতো এবারও অসুস্থ শরীর নিয়ে ছুটে এসেছেন।

রণাঙ্গণের এই বীর যোদ্ধা জানালেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেখানে আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়, আমি যাই। মরণের আগ পযর্ন্ত যাবো। এখানে আমি আত্মার ধ্বনি শুনতে পাই। সেনাবাহিনী আমার কর্মস্থল ছিলো, এই সম্মান আমাকে আনন্দ দেয়।  

বয়সের ভারে কথা জড়িয়ে যাচ্ছে আরেক বীর সন্তান ক্যাপ্টেন মোহাম্মাদ বেলাল উদ্দিনের।   জামালপুর থেকে স্বজনের হাত ধরে এসেছেন মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি শোনালেন দেশ নিয়ে আশার কথা, 'মুক্তিযুদ্ধে দেশ পেয়েছি। কিন্তু দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। সেই দেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক সেক্টরে উন্নতি করে দেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে। এই বিষয়টা ভাবতে ভালো লাগে। আর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সেনাবাহিনী আমাকে যে  সম্মান দেয় তা আমার অনেক ভালো লাগে। ' 

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে নিয়ে আসা এই বীর সন্তানদের কাছে গিয়ে সম্মাননা পদক ও উপহার তুলে দেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। এ সময় তাকে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আবেগে জড়িয়ে ধরেন। সেনাবাহিনী যাতে দেশের উন্নয়নে উজ্জ্বল ভুমিকা রাখতে পারে সেই শুভ কামনা জানান তারা। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জননীরা  সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

অনুষ্ঠানে আসা বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোস্তফা কামালের বৃদ্ধা মা মালেকা বেগম সম্মাননা নিতে এসেছিলেন।

মালেকা বেগম বলেন, গত ৪৬ বছর ধরে ছেলের গৌরব বহন করছি। আমি সুখী মা। ছেলের কূলে কেউ নেই, হয়ত বেশিদিন বাঁচবো না। সেনাবাহিনী আমাকে যে সম্মান দিয়েছে, তা আমার অনেক আনন্দের। সরকারও শহীদের মা হিসেবে অনেক সম্মানসহ অনেক কিছু দিয়েছে আমাকে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সেনা সদস্যের মধ্যে  ৩ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৫ জন বীর উত্তম,৭ জন বীর বিক্রম ও ২২ জন বীর প্রতীক ও তাদের স্বজনদেরসহ মোট ৩৭ জনকে পদক প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ সময়:১৫ ৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
এমসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।