কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়ন আশ্রয়ন প্রকল্পের মনির বাবা গাছি মাজেদ আলী মারা গেছেন। হতদরিদ্র বাবা বেঁচে থাকতেই সংসারে সহায়তা করতে জীবনযুদ্ধে নেমেছিলেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পর বাবা-মায়ের কষ্ট দেখে বসে না থেকে গ্রামের একটি রাইচ মিলে দিনে ৩ টাকা বেতনে কাজ শুরু করে সে সময়কার ১২/১৩ বছরের শিশু মনি। কয়েক বছর পর বাবা মারা গেলে দুই বোন ও মাকে নিয়ে সংসারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পড়ে তার ওপরেই। থেমে না থেকে সে দায়িত্ব পালনেও নেমে পড়ে সফলতা পেয়েছেন মনি।
মনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা মাজেদ আলী গ্রামের কিছু তাল ও খেঁজুর গাছের রস কেটে সারাদিন বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চালাতেন। সামান্য আয়ে দু’বেলা ডাল-ভাতই ঠিকমতো জুটতো না। অর্থের অভাবে দুই বোন আর আমার লেখাপড়া করাও হয়নি। গ্রামের সকলের সহযোগিতায় দুই বোনের বিয়ে দেওয়া হয়’।
‘প্রথমে আমি দিনে ৩ টাকা বেতনে রাইচ মিলে কাজ শুরু করি। প্রথম দিনের আয়ে দুই আঁটি সবুজ শাকের ডাটা কিনে বাড়ি ফিরেছিলাম। তার পর থেকেই শুরু হয় আমার পথচলা। ৩ টাকার মধ্যে ২ টাকা বাড়িতে দিয়ে ১ টাকা মালিকের কাছে জমা রাখতাম। এভাবে ৭০০ টাকা জমা হলে সে টাকায় আমলা বাজারে পান-বিড়ির দোকান দেই’।
তিনি আরো বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ায় আরও বড় কিছু করে বেশি আয়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু দোকানঘর ভাড়া নেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। পরে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলামকে সমস্যার কথা জানাই। তিনি নিজে জামানত দিয়ে আমাকে দোকান ভাড়া করে দেন। এরপর থেকেই ভালো চলছে আমার ব্যবসা। স্ত্রী-সন্তান ও মাকে নিয়ে বেশ সুখেই চলছে সংসারও’।
বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মনি ছোটবেলা থেকেই কঠোর পরিশ্রমী আর বিশ্বস্ত। দোকান ভাড়া নিতে না পেরে আমাকে জানিয়েছিল। আমি নিজে জামানত দিয়ে তাকে ভাড়া নিয়ে দিয়েছি। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তার দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। এখন বেশ সুখেই আছে মনি’।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এএসআর