দীর্ঘদিন থেকে অটোরিকশাওয়ালাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়া নগরবাসী ‘ধর্মঘট’ নিয়ে উল্টো ঠাট্টা-মশকরায় মেতেছেন।
সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ও মালিকদের উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মাধ্যমে জমে থাকা ক্ষোভ ঝাড়ছেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলায় উবার-পাঠাওয়ের মতো অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধসহ আট দফা দাবিতে ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এই দুই জেলার সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। পারলে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট সারাবছর ও আজীবনের জন্য চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নগরবাসী।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসে থাকা সিএনজি অটোরিকশার চালকদের দেখে নগরবাসী ‘উচিত শিক্ষা’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা নাইমুর বলেন, সিএনজি অটোরিকশা যাত্রী পাচ্ছে না, উচিত শিক্ষা হয়েছে। এদের ধর্মঘট যদি এখন সারাজীবন চলে, নো সমস্যা। ঢাকায় সিএনজির আর দরকার নেই।
শিক্ষার্থী মামুন বলেন, এখন যারা অ্যাপ ব্যবহার করে না, তারা অটোরিকশায যাচ্ছে। স্মার্টফোনে অ্যাপসের ব্যবহার বাড়লে অটোরিকশা মালিক ও চালকদের কেজি দরে সিএনজি বিক্রি করতে হবে।
সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমের শেয়ার করা নিউজের লিংকে বা নিজেরাই পোস্ট দিয়ে ‘সারা বছর ধর্মঘট করেন, সমস্যা নাই’; সিএনজি অটোরিকশা যেদিন ধর্মঘটে যাবে সেদিন উবার পাঠাও আরো হিট হবে; ‘ধর্মঘট করবে, শুনে খুশি হলাম, আজীবনের জন্য করলে ভালো হয়; এমন নানা ধরনের মন্তব্য করছেন।
অন্যদিকে, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের নিয়ে গঠিত সংগঠনগুলো একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে একে-অপরকে ভুঁইফোঁড় সংগঠন বলে দাবি করছে। কোনো কোনো সংগঠন অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবার প্রশংসার পাশাপাশি নিজেরাও চালানোর পরিকল্পনা করছেন।
ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, গণপরিবহনে যখন চরম বিশৃঙ্খলা চলছে, তখন এ অবস্থায় অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা উবার, পাঠাও, স্যামসহ অ্যাপে চলা পরিবহনগুলো সুনাম অর্জন করেছে। আমরা অ্যাপসে চালানো পরিবহন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি না। যারা উবার ও পাঠাওসহ অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনগুলো অবৈধ আখ্যায়িত করে বন্ধের দাবি জানিয়েছে তারা ‘ভুঁইফোঁড় সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠন’। সংগঠনটি শ্রমিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও ধর্মঘট আহ্বান করে সিএনজি অটোরিকশা সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।
অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা বন্ধের দাবি কখনও করা হয়নি জানিয়ে ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, অ্যাপসে চলা পরিবহন বন্ধের দাবি করিনি। অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন যাতে নীতিমালায় আসে তার দাবি জানিয়েছি। বিআরটিএ’র অনুমোদিত না হয়েও উবার-পাঠাও রাস্তায় চলছে- এটা বন্ধের দাবি জানিয়েছি।
‘ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নকে’ শ্রমিকবিরোধী সংগঠন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আমাদের ভুইঁফোঁড় বলছে, তাদের নিজেদের অস্তিত্ব নেই, শ্রমিকবিরোধী সংগঠন। নেতারা মালিকপক্ষে টাকা খেয়ে শ্রমিকবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। আমাদের সংগঠন খুব শিগগিরই অ্যাপসে সিএনজি নিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ৫শ চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে ঘোষণা পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এমসি/এএ