দোকানটির পিঠা তৈরির কারিগর ষাটোর্ধ্ব রোকেয়া বেগমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল গ্রামে। স্বামী মারা গেছেন অনেকদিন ধরেই, কোনো ছেলে সন্তানও নেই।
শীতের শুরু থেকে এভাবেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মাদারীপুরের খণ্ডকালীন পিঠা বিক্রেতারা, চলবে মৌসুমের পুরো সময়টাতেই। গ্রামের বাজার, সড়ক-মহাসড়কের পাশে এবং শহরের বিভিন্ন স্থানের চিতই-ভাপা পিঠার দোকানগুলো এখন উৎসবমুখর।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে গরম চিতই-ভাপা আর নানা ধরনের ভর্তায় শীত তাড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ। চিতই পিঠার সঙ্গে চিংড়ি, শুঁটকি, বাদাম, সরিষা আর মরিচ ভর্তার সমন্বয়ে হালকা সান্ধ্যকালীন নাস্তা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
রোববার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিতই-ভর্তা আর ভাপা পিঠা খেতে দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় আর অপেক্ষা। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মৌসুমী পিঠা বিক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে।
স্বল্প পুঁজি নিয়ে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন দরিদ্র মানুষেরা। তাদের অনেকে আবার শুধু শীতকালেই নয়, সারা বছরই এ পেশায় জীবিকা অর্জন করেন।
রোকেয়া বেগমের চিতই পিঠার দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট্ট জ্বলন্ত চুলার চারপাশ ঘিরে বসে-দাঁড়িয়ে আয়েশ করে পিঠা খাচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। চুলার ওপরের ছোট্ট কড়াইয়ে একের পর এক চিতই পিঠা তৈরি করে যাচ্ছেন তিনি। কড়াই থেকে নামাতে না নামাতেই চলে যাচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। পাশে রাখা বাটি থেকে চিংড়ি, মরিচ ও সরিষা ভর্তা কাগজে তুলে দিচ্ছে ছোট্ট মেয়ে।
অনেকদিন ধরেই শিমুল বাজারে পিঠা বিক্রি করেন রোকেয়া। চালের গুঁড়া দিয়ে চিতই পিঠা তৈরি করেন তিনি, সঙ্গে কয়েক থাকে পদের ভর্তা। বাজারে আসা মানুষের কাছে প্রতিদিন সন্ধ্যার হালকা নাস্তায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মজাদার সুস্বাদু এ পিঠা।
শিবচরের উৎরাইল নয়াবাজারে স্থানীয় এক ভ্যানচালক তার স্ত্রীকে নিয়ে নতুন চালু করেছেন পিঠার দোকান। তিনি বলেন, ‘দিনে ভ্যানগাড়ি চালাই আর সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি করি। এ এলাকার অনেকেই বিকেলে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পিঠা খাচ্ছেন। আমিও রাস্তার পাশের দোকান থেকে মাঝে-মধ্যেই পিঠা খেতাম। আমাদের বাজারে পিঠার কোনো দোকান ছিল না। হঠাৎ করেই ভাবনা আর পরদিনই ব্যবসায় নেমে গেলাম’।
‘প্রথম দিন থেকেই আশার চেয়েও বেশি সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিনই ক্রেতা বেড়ে চলেছে। শীতের সময় এসব পিঠা চলেও বেশি’।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সূর্যনগর বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে সারা বছরই চিতই, ভাপা আর তেলে ভাজা মিষ্টি পিঠা বিক্রি হয়। অসংখ্য মানুষের ভিড় লেগে থাকা এসব দোকানের মালিক ও কারিগর স্থানীয় বয়স্কা নারীরা। জীবন সায়াহ্নে এসেও একটু সচ্ছলতার আশায় পিঠা বিক্রি করছেন তারা। পিঠা বিক্রি করে বেশ স্বাবলম্বীও হয়েছেন তাদের অনেকেই।
স্থানীয় যুবক নিক্সন বলেন,‘সন্ধ্যার হালকা নাস্তায় চিতই পিঠা বেশ মজাদার। নানা ধরনের ভর্তা দিয়ে প্রায়ই খাই’।
যুবক ফকরুল হাওলাদার বলেন,‘শীতের ভর্তা-চিতই আর ভাপা পিঠার মজাই আলাদা। তেলে ভাজা খাবারের চেয়ে চালের গুঁড়ার এসব পিঠা শীতের সময়ই বেশি বিক্রি হয়। নানা বয়সীদের ভিড়ও লেগেই থাকে দোকানগুলোতে’।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এএসআর