খনির পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের লোকজন পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণ দাবি করে স্টাডি কার্যক্রম পরিচালনাকারী দেশি-বিদেশি জনবলকে লাঠিসোটা নিয়ে মারধরের হুমকি দিলে শনিবার (২৫ নভেম্বর) থেকে যাবতীয় কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে ফিজিবিলিটি স্টাডি কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ থাকার জন্য প্রতিদিন ৮ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৯ লাখ টন কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি বছরে আরও ৬ লাখ টন উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বড়পুকুরিয়া কোল বেসিনের সেন্ট্রাল পার্টের উত্তরাংশে ১.৫ বর্গ কিলোমিটার এবং দক্ষিণাংশে ৩ বর্গ কিলোমিটার এক্সটেনশন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর এক্সটেনশন অব এক্সিসটিং আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং অপারেশন অব বড়পুকুরিয়া কোল মাইন টুওয়ার্ডস দ্যা সাউদার্ণ এন্ড দ্যা নর্দার্ণ সাইড অব দ্যা বেসিন উইদাউট ইন্টারাপশন অব দ্যা প্রেজেন্ট প্রোডাকশন’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী প্রকল্পটি অনুমোদন করে। আমেরিকান JOHN T. BOYD COMPANY এবং দেশিয় মজুমদার এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ৬৮ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ১৮ মাসের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শেষ করতে হবে। এ লক্ষে ২ মার্চ তারা কাজ শুরু করে।
ফিজিবিলিটি স্টাডির মধ্যে রয়েছে- টপোগ্রাফিক সার্ভে, ৩-ডি সাইসমিক সার্ভে, ১৫টি বোরহোল ড্রিলিং, ইআইএ, ইএমপি, আরএপি, হাইড্রোজিওলজিক্যাল স্টাডি,জিওলজিক্যাল এবং জিওফিজিক্যাল লগিং প্রভৃতি।
সুত্র জানায়, ১৫টি বোরহোলের মধ্যে ৫টি বোরহোল খনন সম্পন্ন হয়েছে। ৩-ডি সাইসমিক সার্ভে পরিচালনার পূর্বে সার্ভে এলাকার জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে ৩ গুণেরও বেশি শস্য ক্ষতিপূরণবাবদ ১ হাজার ৪ জন কৃষককে মোট ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
কিন্তু খনি এলাকার অনেক বাইরে অবস্থিত উত্তর ও দক্ষিণ দিকের কাজিপাড়া, চৌহাটি, হামিদপুর, মোবারকপুর, বৈগ্রাম, কাশিয়াডাঙ্গা, পাতিগ্রাম, পাঁচঘরিয়া, কালুপাড়া ও রসুলপুর গ্রামের জনগণও শস্য ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিপুরণ দাবি করে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ ও উত্তর-দক্ষিণ অংশ সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এবিএম কামরুজ্জামান ফিজিবিলিটি স্টাডির সকল কাজ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে সোমবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানান, খনির উত্তর ও দক্ষিণ দিকের ১০টি গ্রামের কোন স্থাপনার ক্ষতি না হলেও এসব গ্রামের লোকজন ঘর-বাড়ি ফাটলের জন্য কয়লা খনিকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। ক্ষতিপূরণ প্রদান করা না হলে ফিজিবিলিটি স্টাডির কোন কার্যক্রম তারা পরিচালনা করতে দিবে না বলে হুমকি দেয়।
এ অবস্থায় বিসিএমসিএল স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় গ্রামগুলো সার্ভে করে ফাটলের ধরন অনুযায়ী ঘরবাড়ী প্রতি সর্বনিম্ন ৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ/অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়। রোববার (২৬ নভেম্বর) চেক বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসাজসে অর্থের পরিমাণ কম হয়েছে বলে তারা তা গ্রহণে অসম্মতি জানায়।
খনির এমডি আরও জানান, ফিজিবিলিটি স্টাডি কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আমেরিকান, চীনা এবং দেশিয় প্রায় সাড়ে ৩শ জনবল তিনদিন ধরে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। স্টাডি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না এবং নিকট ভবিষ্যতে খনি হতে কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকশি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৪১২ ঘণ্টা, ২৮ নভেম্বর, ২০১৭
এমএমএস