সোমবার (২৭ নভেম্বর) গভীর রাত থেকে শুরু হয় ফার্মগেটের এ সড়কে কাটাকাটি। মূলত ইউলিটি লাইন সরানোর জন্য চলছে সড়কে গর্ত করার কাজ।
মেট্রোরেল অথবা ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট’ (এমআরটি) লাইন-৬ এর প্রাথমিকভাবে উত্তরা তৃতীয় ফেইজ থেকে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণের মূল কাজ শুরু হয় চলতি বছরের আগস্ট মাসে। সবার আগে এই অংশটুকু ২০১৯ সালের মধ্যেই উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের।
এরপরের ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজ শুরু হবে। তবে মূল কাজ শুরুর আগে ইউলিটি লাইন সরাতে হয়। আগারগাঁও থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত সে কাজ এখনই শুরু হয়েছে।
সোমবার দিনগত রাতে সরেজমিন খামারবাড়ি অংশ ঘুরে দেখা গেছে, ব্যারিকেডের সামনে সাদা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বড় অক্ষরে লেখা ‘মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দু:খিত’।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দুটি প্যাকেজ (সিপি ৫ এবং ৬) এর ‘ইউলিটি শিফটিং’ শুরু হলো। এ সড়কটি খুবই ব্যস্ত থাকে বলে রাতেই বেশিরভাগ কাজ করা হবে। এ কারণে ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কাজ শুরু হয়েছে। পরে রাত ১২ টা থেকে কাজ শুরু হয়। ’
প্রকল্পের তথ্যে দেখা গেছে, প্যাকেজ-৫ ও ৬-এর আওতায় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণ কাজ। এ কাজের মেয়াদ ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। এ প্যাকেজ দুটির শুরুতেই মেট্রোরেলের এলাইনমেন্ট বরাবর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রাস্তায় মাটির ওপরে ও নিচে থাকা বিভিন্ন পরিষেবা স্থানান্তর করা হবে। এ সময় রাস্তা খনন, মিডিয়ানের গাছপালা, বৈদ্যুতিক তার, খুঁটি, সিগন্যাল বাতি, পানির পাইপ, ভূ-গর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন, টেলিফোন/ইন্টারনেট লাইন ইত্যাদি স্থানান্তর করা।
মেট্রোরেল প্রকল্প সূত্র জানায়, ‘মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের রুটে মাটির নিচে ও ওপরে যেসব সঞ্চালন লাইন রয়েছে, সেগুলো সরানোর কাজ দ্রুত গতিতে হবে। কারণ ঢাকার সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক ব্যস্ততা এ সড়কে। এর আগে পল্লবী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এমন কাজ করা হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের তার, পাইপসহ নানা সরঞ্জাম ও লাইন স্থানান্তর করা হয়।
প্রকল্প এলাকায় ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (তিতাস), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি (বিটিসিএল), ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি (ওয়াসা), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), গ্রামীণফোন, এমইএস, এসসিএল, এফঅ্যান্ডএইচ ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নানা ইউটিলিটি লাইন পাওয়া গেছে। এ সড়কে নিচে ১৫ টির বেশি ইউটিলিটি লাইন আছে।
উত্তরা-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্ত্বর-তোপখানা রোড হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত যাবে ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল।
মেট্রোরেলের স্টেশন সংখ্যা মোট ১৬টি। সেগুলো হচ্ছে-উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এবং মতিঝিল। রুটের মোট দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার, রোলিং স্টক ২৪ সেট। প্রতি সেটে ৬টি করে কার থাকবে। ঘণ্টায় গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার এবং ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
এসএ/এমএমএস