নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা সম্বলিত এমনই একটি অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে এসেছে দেশখ্যাত গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। আর এই বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে কোম্পানিটির কাছে ‘নিবেদিতা’ নামে একটি বিশেষ বিমা করেই।
গ্রিন ডেল্টার ভিন্নমাত্রার এই উদ্যোগ দেশে-বিদেশে তুমুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পায়োনিয়ার হিসেবে গ্রিন ডেল্টাকে স্বীকৃত দিয়েছে জাতিসংঘের গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট। সম্প্রতি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারজানা চৌধুরী উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারপ্রেনার অর্গানাইজেশন (ইও) গ্লোবালের কাছ থেকেও পুরস্কার নিয়েছেন।
বাংলানিউজ কথা বলছিল ফারজানা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, একটি বিমা বদলে দেবে নারীদের জীবন। গ্রাহকরা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে বাটন চাপ দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে তার একান্ত আপনজনের দু’টি নম্বর, সিকিউরিটি কোম্পানি এলিট ফোর্স ও গ্রিন ডেল্টার কাছে বার্তা পৌঁছে যাবে। এলিট ফোর্স সঙ্গে সঙ্গে ট্র্যাকার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অবস্থান চিহ্নিত করে তাকে উদ্ধারে রওয়ানা দেবে।
পরিবারের লোকজন জানতে পারবে তার অবস্থান। গ্রিন ডেল্টা বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার সহায়তা নেবে। অর্থাৎ অপরাধী বুঝে ওঠার আগেই এলিট ফোর্স ও পুলিশ পৌঁছে যাবে ঘটনাস্থলে।
ফারজানা আরও জানান, শারীরিক নিরাপত্তার পাশাপাশি আর্থিক নিরাপত্তাও পাবেন নিবেদিতার গ্রাহকরা। তারা সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ নিতে পারবেন। এতেও সহায়তা করবে গ্রিন ডেল্টা। রয়েছে আরও নানাবিধ সুবিধা।
গ্রিন ডেল্টার সিইও বলেন, ইন্স্যুরেন্স সেবা আমাদের কোর বিজনেস, কিন্তু গ্রাহকদের চারদিকে সেবা দেওয়ার জন্য একটি ইউনিক প্লাটফর্ম তৈরি করেছি আমরা। এই প্লাটফর্মে এলে তাদের সমস্ত চাহিদা পূরণ হবে। শুধু বিমা সেবা নয়, একটি ইউনিট তৈরি করে গ্রাহকদের চারদিকের সব প্রয়োজন পূরণ করবে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা হলে হাসপাতাল টু হাসপাতলে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি আমরা। আমাদের রয়েছে দেশ-বিদেশের উন্নত সব হাসপাতালের সঙ্গে করপোরেট চুক্তি। গ্রাহকের বৈদেশিক মুদ্রার দরকার হলো, মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে সমাধান করছি। বিও অ্যাকাউন্ট কিংবা শেয়ার নিয়ে কোনো সমস্যা হলো, আমরা ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে সমাধান করে দিচ্ছি।
২০০৯ সালে ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় পদ ছেড়ে বিমায় যোগদানের স্মৃতিচারণ করে ফারজানা চৌধুরী বলেন, ব্যাংক থেকে চাকরি ছাড়ার সময় আমাকে বলা হয়েছিলো আমি অবসরে যাচ্ছি। বিমা খাতে যোগদানের সিদ্ধান্তকে অনেক ভুল বলে সাবধান করেছিলেন। তখন সার্বিক বিমা খাতের অবস্থা অনেক নাজুক ছিলো। সেখান থেকে আমরা এখন পর্যায়ক্রমে উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
সাত বছরে টেলকো, বিদেশি ব্যাংক, দেশি ব্যাংক, বিদেশি সংস্থা থেকে লোকজন গ্রিন ডেল্টায় কাজ করতে এসেছেন জানিয়ে ফারজানা চৌধুরী বলেন, এটা আমাদের জন্য সারপ্রাইজ।
তিনি বলেন, বিমা খাতের প্রধান সমস্যা সচেতনতার অভাব। আমাদের দেশের বিমার প্রতি গ্রাহকদের আস্থা নেই। সেজন্য বিমার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করতে পারছে না। তাই দেশের মানুষকে বিমার আওতায় নিয়ে আসতে শহরের পাশাপাশি আমরা গ্রামেও চলে যাচ্ছি।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) শুরুর পর বিমা খাতে অনৈতিক প্রতিযোগিতা কমতে শুরু করেছে জানিয়ে ফারজানা চৌধুরী বলেন, কিছু দুর্বলতার কারণে ক্ষেত্রবিশেষে অনৈতিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। আশা করছি, বিমা কোম্পানির অনৈতিক প্রতিযোগিতা বর্তমান আইডিআরএ বন্ধ করবে। পাশাপাশি ফ্লেক্সিবল বিমা মার্কেট সৃষ্টি করবে।
গ্রিন ডেল্টার সিইও বলেন, বিমা খাতে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলের পাঠ্য-পুস্তকে বিমার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা দরকার। পর্যায়ক্রমে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিমা সম্পর্কে পাঠদান বাধ্যতামূলক করতে হবে। কারণ অনেকে জানে না বিমা কী, কেন করতে হবে? বিমার প্রিমিয়াম কী?
বিমা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ২০১০ সাল থেকে ব্যাপকভাবে কাজ করছেন জানিয়ে ফারজানা চৌধুরী বলেন, গ্রিন ডেল্টা নতুন ইনোভেশন সেলও করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের শতকরা ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠী তরুণ, এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ হচ্ছে নারী। আর নারীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে ‘নিবেদিতা’। এর মাধ্যমে কয়েক হাজার নারীর জীবিকা নির্বাহের পথ পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি।
ফারজানা চৌধুরী বলেন, গ্রিন ডেল্টা সোশ্যালি রেসপনসেবল অরগাইজেশন। এই কারণেই সোশ্যাল প্রজেক্টগুলো হাতে নিয়েছি। সেই লক্ষ্যে মাইক্রোহেলথে আমরা বিনিয়োগ করেছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্বিতীয় স্টেজে কাজ করছে গ্রিন ডেল্টা। আমরা টাঙ্গাইলের কালিহাতি ও মধুপুরে কাজ করছি। এই এলাকার চার লাখ পরিবার স্বাস্থ্য বিমার আওতায় এসেছে। তারা হেলথ কার্ডের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
গ্রিন ডেল্টা ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্সের দিকে যাচ্ছে জানিয়ে কোম্পানির সিইও বলেন, সার্ভার ইন্স্যুরেন্সের বিষয়ে পরিকল্পনা চলছে। বয়স্কদের ইন্স্যুরেন্স চালুর কাজও চলমান। প্রবাসী, শিক্ষার্থী এবং নারীদের জন্য রয়েছে বিশেষায়িত বিমা। ট্রাভেলে ডোমেস্টিক এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স চালু করেছি। পুরুষদের জন্যও বিমা চালু করবো।
বিমা খাতের স্বপ্নচারী বলে খ্যাতিপ্রাপ্ত ফারজানা চৌধুরী মনে করেন, এখন দেশ থেকে চিকিৎসার জন্য
মানুষ বিদেশে যাচ্ছে। এমন দিন আসবে, যখন বিদেশ থেকে লোক আসবে চিকিৎসা নিতে। সে লক্ষ্যেও হাসপাতাল স্থাপনে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে গ্রিন ডেল্টা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু অনেক পরিশ্রমী। আমাদের দেশে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, মানুষ কিন্তু ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায়।
২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ নারীর এবং ১০ লাখ কৃষকের জীবনমান পরিবর্তন করতে চান জানিয়ে গ্রিন ডেল্টা সিইও বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে কৃষকদের জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। শস্য বিমার মাধ্যমে এই কৃষকদের জীবনে পরিবর্তন আনতে চাই আমরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসায়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া ফারজানা চৌধুরী শুরুর দিকে কাজ করেন ব্র্যাক ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। পরে অস্ট্রেলিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে মোনাশ ইউনিভার্সিটি মেলবোর্ন থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এসএমই ব্যাংকিং খাতে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে অসামান্য ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ‘নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন’ তাকে ‘বেগম রোকেয়া শাইনিং পারসোনালিটি অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে। বিমা ও মাইক্রোফিন্যান্সের ক্ষেত্রেও বহুমুখী অভিজ্ঞতা ফারজানার চৌধুরীর ঝুলিতে। বিমা খাতে অবদানের জন্য তার গলায় ঝুলছে একাধিক পদক, শোকেসে বেশ কিছু সম্মাননা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
এমএফআই/এসআই