মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মুখপাত্র এবং আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান অভিযান শেষে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, নিহতেরা জেএমবির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
অভিযানে বাড়িটি থেকে দুটি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, তিনটি ইম্প্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) এবং ১২টি পাওয়ার জেলসহ বোমা তৈরির বেশকিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দুইটি শক্তিশালী হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করেছে র্যাবের বোমা বিশেষজ্ঞ দল। এ সময় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এই র্যাব কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, মিরপুরের দারুস সালামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জানায়, সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের সংগঠনকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করতে কর্মী সংগ্রহের কাজ চলছে। সেখানে বিস্ফোরক তৈরির কাজও শেখানো হচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের সদস্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি শুরু করে। কিছুদিন আগে থেকে আলাতুলী ইউনিয়নের ওই বাথানবাড়িতে কয়েকজন যুবককে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (২৭ নভেম্বর) দিনগত রাত ৩টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে র্যাব সদস্যরা।
তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে দুই জঙ্গি বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তারা নিজেদের এনজিও কর্মী বলে পরিচয় দেন। বাড়ির মালিককে তারা পাখিপ্রেমী বলে পরিচয় দেন। বাড়িটি থেকে চরাঞ্চলের পাখিদের ছবি তুলবেন বলে জানান তারা। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিকের স্ত্রীসহ তিনজনকে বিকেলে রাজশাহীতে র্যাব-৫ এর সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আটকেরা হচ্ছেন-ওই বাথানবাড়ির মালিক রাশিকুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), তার শ্বশুর খোরশেদ (৬০) ও শাশুড়ি মনিরা বেগম (৫০)।
মুফতি মাহমুদ জানান, নিহত জঙ্গিরা রাজশাহীতে একটি বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। ঢাকার মিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর তাদের এই পরিকল্পনার খবর জানা যায়। এরপরই তাদের নজরদারিতে ছিল এই এলাকা।
মুফতি মাহমুদ ব্রিফিংয়ে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাড়িটি ঘেরাও করে রাতে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়।
এসময় জঙ্গিরা বাড়ির ভেতর থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি করে। জবাবে র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এরপর বিস্ফারণে বাড়িটিতে আগুন লেগে যায়। ধারণা করা হচ্ছে বিস্ফোরণের সময় জেএমবি সদস্যরা নিহত হয়েছেন এবং তাদের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সকাল ৮টার দিকে বোমা ডিসপোজাল ইউনিট বাড়ির ভেতরে যায়। বেলা ১২টার দিকে তারা বাড়িটি তল্লাশি করে বেরিয়ে আসে।
আলাতুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ জানান, আলাতুলী নতুনপাড়া গ্রামে ওই বাথানবাড়ির মালিক রাশিকুলের আসল বাড়ি। সেই বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বিলের ভেতর গরু-ছাগল পালনের জন্য ওই বাথানবাড়িটি করা হয়েছিল।
বাথানবাড়িটিতে রাশিকুল, তার স্ত্রী, ১৫ বছর বয়সী এক ছেলে এবং তার শ্বশুর থাকতেন। রাশিকুল ইসলাম ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই গোদাগাড়ীর সাহাব্দিপুরে তিনি তার শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। সে বাড়ি থেকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ তিনজনকে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে, গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের দক্ষিণে পদ্মা নদী। নদীর ওপারে বিস্তীর্ণ চর। এলাকাটি এই উপজেলার শেষপ্রান্ত এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর আলাতুলী ইউনিয়নের মধ্যে। এই চরে গরু-ছাগল পালনের জন্য টিনশেড বাথানবাড়ি করেছিলেন রাশিকুল। এর আশপাশের দুই কিলোমিটারের ভেতরে কোনো বসতবাড়ি নেই। তাই জঙ্গি তৎপরতা চালাতেই নির্জন এলাকার এই বাথানবাড়িটিই ভাড়া নেওয়া হয়। চরাঞ্চল হওয়ায় বাড়িটিতে জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে স্থানীয়রা কিছু টের পাননি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন র্যাবের মহাপরিচালক আনোয়ার লতিফ খান। বেলা সোয়া ১২টার দিকে তিনি হেলিকপ্টারে করে ঘটনাস্থলে যান।
**জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়ি ঘেরাও, গোলাগুলি চলছে
**আগুনে পুড়ে গেছে চর আলাতুলির জঙ্গি আস্তানা
**চাঁপাইনবাবগঞ্জ জঙ্গি আস্তানা: আটক ৩
**জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার, আটক ৩
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭/আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা
এসএস/আরআর