জেলেদের মাছ ধরার জালে আটকা পড়েও প্রচুর ডলফিনের মৃত্যু হয়। এ কারণে হুমকির মুখে বিরল প্রজাতির এই প্রাণীটির জীবন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. রবিউল ইসলাম বাংলাদেশে স্বাদু পানিতে বসবাসকারী শুশুকের খাদ্যাভাস নির্ণয় করেছেন। যা দেশে এই প্রথম।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘Ganges River dolphin (Platanista gangetica) স্থানীয়ভাবে শুশুক, শুশু, শোষ বা শুর নামে পরিচিত। পৃথিবীতে মানুষের পরই সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে ডলফিনকেই মনে করা হয়ে থাকে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮০ প্রজাতির ডলফিন পাওয়া যায়, যার মাত্র ৬টি প্রজাতি বাংলাদেশের জলসীমায় বসবাস করে। এর মধ্যে শুশুক বা শুশু এবং ইরাবতী- এ দুই প্রজাতি সামান্য মিঠা পানিতে বাস করে’।
‘শুশুক বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে বসবাস করে। কিন্তু এটির সংখ্যা গত ২০/২২ বছরে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। ২০০৪ সালে IUCN এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় স্থান দিয়েছে’।
‘এজন্য সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান টিকিয়ে রাখতে এবং প্রজাতির বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করতে এটি নিয়ে গবেষণা করা সময়ের দাবি ছিলো’- বলেন রবিউল ইসলাম।
‘শুশুকের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আপনি কেন কাজ করলেন এবং কেন মনে হয়েছে কাজটি গুরুত্বপূর্ণ?’- জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি প্রজাতি তার বাস্তুসংস্থানের কোন কোন খাবার গ্রহণ করছে, আমরা যদি সেটি নির্ণয় করতে পারি, তাহলে আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবো- ওই বাস্তুসংস্থানের খাদ্যশৃঙ্খলে বা খাদ্যজালে প্রাণিটির অবদান কতোটুকু। আমরা যদি তার সঠিক খাদ্যাভ্যাস জানতে পারি, তাহলে সে এই খাবারের সন্ধানে কোথায় কোথায় যেতে পারে, এবং তার খাবারের সন্ধানের কারণে আমাদের মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার ওপর কোন প্রভাব পড়ছে কি-না কিংবা শুশুক তার শিকার ধরতে গিয়ে মৎস্যজীবীদের জালে আটকা পড়ছে কি-না এবং কোন কোন জালে তাদের খাবারগুলো বেশি ধরা পড়ছে, এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা করতে পেরেছি’।
‘আমরা ভবিষ্যতে এদের সংরক্ষণে যদি শুশুক-ইরাবতীর হটস্পটগুলোতে যদি জালগুলোর ব্যবহারের ওপর কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে পারি, যাতে আমাদের মৎস্যজীবীদের ক্ষতি হবে না আবার প্রজাতিটিও টিকে থাকবে। অথবা ওই সকল জালে যদি কোনো ডিভাইস যুক্ত করতে পারি, যার মাধ্যমে শুশুক জালের উপস্থিতি অনুধাবন করতে পেরে ওই জালে আটকা না পড়ে অন্য দিকে চলে যেতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে মৎস্যজীবীরা এমন অনেক ডিভাইস ব্যবহার করেন, যেগুলো সেসব দেশের অ্যান্ডেমিক প্রাণিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখছে’।
‘মূলত এই খাদ্যাভ্যাস নির্ণয় শুশুক সংরক্ষণে জন্য প্রিলিমিনারি পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে’ বলেও জানান রবিউল ইসলাম।
কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মৃত আটকেপড়া শুশুক জেলেদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে পাকস্থলি ডিসেকশন করে সরাসরি তার শিকার করা প্রাণিগুলোকে শনাক্ত করা হয়েছে সেসব মাছের কানের ওটোলিথ দেখে। কারণ, প্রতিটি মাছের কানের ওটোলিথের গঠন ভিন্ন ভিন্ন। এ কাজটি করতে মোট দেড় বছরের মতো সময় লেগেছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো ব্যাপারটিতে আমাকে আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা করেছে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি ও বাংলাদেশ সেটাশান ডাইভার্সিটি প্রজেক্টের গবেষকরা। কাজটির তত্ত্বাবধান করেছেন খুবি’র ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মুহম্মদ আব্দুর রউফ।
‘ভবিষ্যতে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করতে চান কি-না?’- জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম জানান, সঠিক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অবশ্যই তিনি শুশুক নিয়ে তার কাজ এগিয়ে নিতে চান। এ লক্ষ্যে শিগগিরই খাদ্যাভ্যাসের ওপর একটি গবেষণা প্রবন্ধ পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশ করবেন’।
খুবি’র ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মুহম্মদ আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এটিই প্রথম শুশুক বা ডলফিনের খাদ্যাভ্যাস নির্ণয়। আমার তত্ত্বাবধানে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির সহযোগিতায় রবিউল ইসলাম এ কাজটি করেছেন’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
এমআরএম/এএসআর