দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে। কিন্তু তারপর এ নিয়ে আর কোনো নড়াচড়া নেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শহীদ খান প্রথমে উচ্চমান সহকারী হিসেবে ১৯৮৮ সালে এনবিআরে যোগদান করেন। তখন তার পে স্কেল ছিলো ২ হাজার টাকা। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হলে পে-স্কেল হয় ৮ হাজার টাকা। ২০১৫ সালের আগস্টে রাজস্ব কর্মকর্তা হওয়ার পর বর্তমানে তার পে-স্কেল ১৬ হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহীদ খান ২০০২-০৩ সালে হিলি, সোনা মসজিদ ও বুড়িমারী কাস্টমস স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। তখন অবৈধভাবে অর্জিত ২৫ লাখ টাকা দিয়ে রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জে ১/বি জোয়ার সাহারা প্লটটি কেনেন। তারপর ঢাকা কাস্টমস হাউস ও আইসিডি কমলাপুরে থাকাকালে প্রিভেনটিভের মাসোয়ারার অর্থ আত্মসাৎ করে সেখানে তিনি বাড়ি করেন ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে। তখন প্রিভেনটিভের মাসোয়ারার (পুলের) টাকা তুলতেন তিনি। আর সেই টাকা রাখতেন তখনকার পিয়ন (বর্তমানে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী) খোকনের কাছে।
সে সময় দৈনিক ২-৩ লাখ টাকা কলেকশন হতো। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি আত্মসাৎ করতেন শহীদ খানই। সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পণ্য খালাসের বিনিময়ে নেওয়া সেই টাকা অফিস শেষে ভাগ হতো এবং সেখান থেকেও ভাগ পেতেন শহীদ।
ঢাকা কাস্টমসে থাকাকালে বিভিন্ন ইস্যু দিয়ে গুদাম থেকে মাল বের করে বাইরে বিক্রি করারও অভিযোগ আছে শহীদ খানের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের যেন অন্ত নেই।
২০১৩-১৪ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে গাড়ির গ্রুপে এসেসমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন শহীদ খান। সে সময় ৬৮ লাখ টাকায় মোহাম্মদপুরে ৩ কাঠার একটি প্লট কেনেন তিনি। ২০১৫ সালে বায়তুল মোকাররমে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ২০১ নাম্বার দোকান কেনেন। এছাড়া সিটি ব্যাংক নিকুঞ্জ শাখার ২৮০১১১৩৫৬৭০০১ নাম্বার একাউন্টে ২০১০-১১ সালে তার নামে ৪৮ লাখ টাকার স্টেটমেন্টও পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, এই এনবিআর কর্মকর্তা পাঁচটি বিয়ে করেছেন। বড় বউয়ের নাম মমতাজ বেগম। তিনি নিকুঞ্জের বাড়িতে থাকেন। দ্বিতীয় বউ হেলেন মোহাম্মদপুরে থাকেন শহীদ খানের কিনে দেওয়া ফ্ল্যাটে। আর তৃতীয় বউ রাণী বালা দাশ নারায়ণগঞ্জে নার্সের চাকরি করেন। চতুর্থ বউ হাসিনা বেগম, আর পঞ্চম বউ রীমা। যাকে ভাড়া বাসায় রাখেন শহীদ খান।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চলতি বছরের ২৭ জুলাই তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আসে দুদকে। দুদক অভিযোগ আমলে নিয়ে সহকারী পরিচালক শফিউল্লাহকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু তদন্তের গতি এখন একেবারেই মন্থর।
এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। যেই দুর্নীতি করুক না কেন, তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৭
এসজে/জেডএম