এমনই এক ভুক্তভোগী যুবক কক্সবাজার সদর উপজেলা পিএমখালী’র ঘাটকুলিয়া পাড়ার মৃত আব্দুর সালামের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল (২২)।
তিনি জানান, তার বাবা-মা দুইজনই মারা গেছেন।
নিয়ম অনুযায়ী গত ১৮ নভেম্বর মোহাম্মদ ইসমাইলের বাড়িতে যান রেজাউল হাসান নামের এক এএসআই। রেজাউল হাসানকে এএসআই মোঃ হোসেনই পাঠিয়েছিলেন।
মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘সে সময় এএসআই রেজাউলের দাবিমতো আমি তাকে ১৭ শত টাকা দেই। পরে গত ২৫ অক্টোবর ডেলিভারির তারিখ অনুযায়ী আমি ও আমার ভাইপো ফেরদৌস আলম পাসপোর্ট অফিসে যাই। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট না যাওয়ায় পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জানতে আমরা এএসআই মোঃ হোসেনের সাথে দেখা করি। এসময় এএসআই মোঃ হোসেন আমার কাছে জানতে চান, এএসআই রেজাউল হাসানকে কত টাকা দিয়েছি। তার ভাগের টাকা কোথায়। জবাবে আমি জানাই যিনি গিয়েছিলেন (এএসআই রেজাউল হাসান) তাকে ১৭০০ টাকা দিয়েছি। একথায় এএসআই হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, তার হিসাব তার সাথে আমারটা আমার। এসময় মোহাম্মদ হোসেনের পাশে থাকা একজন পুলিশ সদস্য বলে ওঠেন, এত কথা না বলে দেড় হাজার টাকা দাও। এএসআই মোঃ হোসেন বলেন, তোমার কাছে না থাকলে সাথে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়ে দাও। আর দেড় হাজার না থাকলে ১ হাজার টাকা হলেও দাও। পরে আমার কাছে থাকা ৫০০ টাকা তাকে দেই।
এরপরও কোনো কাজ হয়নি। পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের খোঁজখবর নিতে ৪-৫ বার এএসআই মোঃ হোসেনের কাছে গিয়েছেন মোহাম্মদ ইসমাইল। আর এএসআই মোঃ হোসেন তাকে বারবারই ফেরত পাঠিয়েছেন নানা অযুহাতে। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর তিনি পুলিশ সুপার ক্যার্যালয়ে গেলে এএসআই হোসেন তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘এখানে বারবার আসো কেন? আর এই নাম্বারে ফোন করো কেন? জানো না এইটা সরকারি নাম্বার? আর এখানে আসবে না। ’
মোহাম্মদ ইসমাইল পাসপোর্টে’র ব্যাপারে জানতে চাইলে এএসআই মোঃ হোসেন তাকে বলেন, ‘তোমার নামে মামলা আছে। মামলা তুলে নিয়ে এসো। এরপর দেখা যাবে। ’
পরে তিনি ওই এএসআই রেজাউল হাসানকে ফোন করেন। ফোনে রেজাউল হাসান জানান, তিনি ব্যস্ত আছেন। কথা বলতে পারবেন না।
মোঃ ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তারপরও তারা নানা অজুহাত তৈরি করছে। সবকিছু ঠিক থাকার পরেও কেন পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না! আমার অনেক পরে আবেদন করেও অনেকে পাসপোর্ট পেয়ে গেছে। ’
ডিএসবি’র এএসআই রেজাউল হাসান বিষয়টি স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, ডিএসবি’র এএসআই মোঃ হোসেনের অনুরোধে পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য পিএমখালীর মোহাম্মদ ইসমাইলেই কাছে তিনি গিয়েছিলেন। আর তথ্য নিয়ে এএসআই মোঃ হোসেনের কাছে জমাও দিয়েছেন। ইসমাইলের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি পাশ কাটিয়ে যান। পরে জানান, ওই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ’
এ ব্যাপারে ডিএসবি’র এএসআই মোঃ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পুলিশ ভেরিফাই বা পুলিশ প্রতিবেদনের কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় মামলা থেকে শুরু করে নানা বিষয় খতিয়ে দেখতে হয়। তাই তার নামে কোনো মামলা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব কাজের জন্য একটু সময় লাগে। ’
টাকা নেওয়া ও টাকা চাওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সাপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এটি আইনগত অপরাধ। কারো বিরুদ্ধে এই ধরনের কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। আর ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
টিটি/জেএম