বরিশাল পাসপোর্ট অফিসের সেবায় বিদ্যমান অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতি চিহ্নিত করে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপের অন্তর্ভুক্ত সেবাগ্রহীতাদের ৭১.১% পাসপোর্ট সেবায় অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
পাসপোর্ট অফিসের সেবায় নির্ধারিত ফি’র বাইরে ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ দেওয়ার গড় পরিমাণ ১৮৫৪ টাকা।
বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পাসপোর্ট সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পাশাপাশি পুলিশ প্রতিবেদন প্রণয়নে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) কর্তৃক আবেদনপত্রে অযথা ত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা, জঙ্গি কার্যক্রম বা অন্য রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততার ভয় দেখানো, বাড়িতে না এসে চায়ের দোকান বা থানায় ডেকে পাঠানো, নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ বা ঘুষ দাবি করার বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এছাড়া, পাসপোর্ট বিতরণে ৩২.৩% সেবাগ্রহীতার নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হয়েছে। বিলম্বের গড় মাত্রা ছিল ৮ দিন।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় নগরের সদর রোডের বিডিএস মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন টিআইবি’র রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি অ্যাসিট্যান্ট মো. আলী হোসেন।
গবেষণা অনুযায়ী জরিপের আওতাভুক্ত বরিশাল পাসপোর্ট অফিসের সেবাগ্রহীতাদের ৫৬.৩% দালাল বা অন্যের সহযোগিতা নিয়েছে। দালালদের একাংশ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এসবি পুলিশের একাংশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। পাসপোর্ট প্রার্থীদের কাছ থেকে দালালরা যে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করে তার একটি অংশ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এসবি পুলিশের একাংশকে প্রদান করে থাকে।
বরিশাল পাসপোর্ট অফিসের দালালির সাথে স্থানীয় নামধারী সাংবাদিক, পুলিশের একাংশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের একাংশ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যারা দালালের সহযোগিতা নিয়েছে তাদের মধ্যে ৭২.১% বিভিন্ন ঝামেলা ও ভোগান্তি (যেমন-দীর্ঘ লাইন, একাধিকবার আসা ইত্যাদি) এড়িয়ে চলতে, ৬২.৯% দালালের সহযোগিতা ছাড়া কর্তৃপক্ষের আবেদনপত্র জমা না নেয়া , ৩৬.৫% নিয়মকানুন সম্পর্কে না জানার কারণে সহযোগিতা গ্রহণ, ১১.৭% নির্ধারিত সময়ের পূর্বে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য, ৬.১% পুলিশি তদন্তে হয়রানি এড়ানোর জন্য এবং ৪.৬% সময়ের অভাবে দালালের সহায়তা নেওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণার প্রেক্ষিতে বরিশাল পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালাল চক্রকে শাস্তির আওতায় আনা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পুলিশের সাথে নিয়মিত সমন্বয় করা সহ ১৩ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় গঠিত বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)।
বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস বরিশালের পাসপোর্ট সেবার বিভিন্ন ধাপে বিদ্যমান অনিয়ম ও দুর্নীতিসমূহ চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন নিশ্চিতে বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে প্রয়োজনীয় জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিকসের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, আবেদনপত্র সত্যায়ন, প্রত্যয়ন ও পুলিশ প্রতিবেদনের বিধান বাতিল এবং দালালের দৌরাত্ম্য নির্মূলসহ ১৩ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেছে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন, সনাক সদস্য প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেন (যুগ্ম সচিব-অব:), অ্যাড. মানবেন্দ্র বটব্যাল, প্রফেসর শাহ সাজেদা, নূরজাহান বেগম, সাইফুর রহমান মিরণ, শুভংকর চক্রবর্তী এবং টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহনুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘন্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
এমএস/আরআই