বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এক বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে বক্তব্য দেন পোপ ফ্রান্সিস।
বক্তব্যে মিয়ানমারে দেওয়া ভাষণের মতো যথারীতি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এড়িয়ে গেছেন পোপ। তবে মিয়ানমারের রাখাইনে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন তিনি।
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, গত কয়েক মাসে রাখাইন থেকে আসা বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে ও তাদের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ উদার মানসিকতা ও অসাধারণ সংহতির পরিচয় দিয়েছে। এটা ছোট কোনো বিষয় নয়, বরং পুরো বিশ্বের সামনেই এটি ঘটেছে।
আরও পড়ুন>>
** বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করলেন পোপ ফ্রান্সিস
** স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের শ্রদ্ধা
** ঢাকায় পোপ ফ্রান্সিস
‘পুরো পরিস্থিতি, মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে থাকা আমাদের ভাই-বোন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু; তাদের ঝুঁকির গুরুত্ব বুঝতে আমরা কেউই ব্যর্থ হইনি। ’
তিনি বলেন, ‘এই গুরুতর সংকট মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ’
এর আগে বঙ্গভবনে একান্তে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরতে মিয়ানমারকে অব্যাহত চাপে রাখতে ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যাতে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারকে অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করতে পারে সে জন্য রাষ্ট্রপতি পোপের ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে পোপের অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, তার (পোপ) এই অবস্থান মিয়ানমার থেকে জোরপূর্ব বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিজ দেশে সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনের জন্য ভ্যাটিকান সিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ভ্যাটিকান প্রথম দূতাবাস স্থাপন করে উল্লেখ করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, তখন থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্যাটিকানের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে জোরদার হচ্ছে।
এর আগে বিকেল তিনটায় মিয়ানমার সফর শেষে নেপিদো থেকে সরাসরি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান পোপ। এ সময় বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বিমানবন্দরে পোপ ফ্রান্সিসকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সাভারের স্মৃতিসৌধে যান; সেখান থেকে যান রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে।
রাতে পোপের সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি।
সূচি অনুযায়ী, সফরের দ্বিতীয়দিন ১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনা ও যাজক অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন পোপ। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তার।
একই দিনে বাংলাদেশের ক্যাথলিক বিশপসহ অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
সফরের শেষ দিন ২ ডিসেম্বর (শনিবার) মাদার তেরেসা ভবন পরিদর্শন করবেন পোপ। পরিদর্শন করবেন বিভিন্ন মিশনারিও। বৈঠকে বসবেন খ্রিস্টধর্মের নেতাদের সঙ্গে। বিকেলে তিনি নটরডেম কলেজে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে।
সফর শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় রোমের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়বেন পোপ ফ্রান্সিস।
গতবছর প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের ক্যাথলিক বিশপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানালে পোপ বছরের শেষ দিকে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ আগস্ট এই ধর্মগুরুর ঢাকা সফরের সূচি ঘোষণা হয়।
এর আগে ১৯৮৬ সালে পোপ জন পল এবং ১৯৭০ সালে পোপ ষষ্ঠ পল বাংলাদেশ সফর করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
এমইউএম/এমএ/