রাস্তার ওপর কিংবা ফুটপাতে অথবা ভ্যান গাড়ির ওপর শীতের গরম কাপড় ছাড়াই রাত কাটছে ছিন্নমূল মানুষের। অধিকাংশের কাছেই নেই কোনো কম্বল বা গরম কাপড়।
রাজধানীর বিমানবন্দর রেল স্টেশনের বামপাশে গাড়ি পার্কিংযের জায়গায় কয়েকজনকে নিয়মিতই আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করতে দেখা যায়।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে সেখানে গেলে রাসেল নামে একটি পথশিশু বলে উঠে, ‘আঙ্গকেল ছবি তুইলেন না, একটা কম্বল দিয়া যান। ’
পাশেই বসে আগুন পোহাচ্ছেন ভ্যান চালক মো. আলী। তিনি শীতের আগমন সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, শীত আসায় অনেক কষ্টে আছি। আমি গরীব মানুষ, রাতে ভ্যানের ওপর ঘুমাই। কিন্তু এহন শীতের জ্বালায় বাচি না। কম্বল বা শীতের কাপড় কিনার সামর্থ্যও নাই।
শীত নিয়ে মো. আলীর এমন আতঙ্কের কথা শুনে তাকে সাহস দেওয়ার জন্য রাসেল বলে উঠে, ভাই ভয় কইর না, আল্লাহ আছে না। গত বছর তো কোনো কিছু হয় নাই, এবারও এমনই কাইটা যাইব।
১০ বছরের শিশু রাসেলের এমন সাহসী কথায় কিছুটা সাহস পান মো. আলী। তিনি বলেন, ‘হ ঠিক কইছত। কোনো না কোনোভাবে দিন পার হয়বই। ’
একটু সামনে যেতেই লক্ষ্য করা যায়, রেল লাইনের একদম পাশে জরাজীর্ণ একটি কম্বল গায়ে দিয়ে দুজন শুয়ে আছেন। এই দুজনের নাম সুমন ও সুজন।
সুমন ও সুজন দুইজনই রাজধানীতে রিকশা চালান। গ্রামের বাড়িতে টাকা দিয়ে হাতে তেমন একটা টাকা পয়সা থাকে না বলে রাস্তায় ঘুমান।
সুমন ও সুজন শীতের আগমন ও ভোগান্তি সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের শীতের সময় সব থেকে বেশি কষ্ট হয়। গত বছর একটি কম্বল ছিল বলে দুজন কোনো মতে ঘুমাইতাছি। কিছু দিন পর এই কম্বলে শীত মানব না। তহন যে কি অইব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুযায়ী, এবারে শীতে হয়তো এসব ছিন্নমূল মানুষের ভোগান্তি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার শীতকালে তাপমাত্রা কমে নেমে আসতে পারে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এক্ষেত্রে পৌষে ৬ ডিগ্রি (ডিসেম্বর), আর মাঘে (জানুয়ারি) আরো কমে ৪ ডিগ্রিতে নামবে তাপমাত্রা।
এমনটা যদি সত্যি হয় তাহলে আগামী দিনগুলোতে ছিন্নমূল মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকবে না। এছাড়া অতিরিক্ত শীতে তারা ভুগবে নানা শারীরিক সমস্যাতেও।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
এমএসি/জেডএম