ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘আশির ফেরে’ মেয়র আনিসুল!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৭
‘আশির ফেরে’ মেয়র আনিসুল! ৮০ নামাঙ্কিত এই বাড়িতে আর কোনোদিনই পড়বে না আনিসুল হকের পায়ের চিহ্ন। ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/ বাংলানিউজ

ঢাকা: মূল ফটকের পাশে অংকে লেখা ৮০, শুধু এটুকুই। রাজধানীর বনানীর ২৩ নম্বর রোডের ৮০ নম্বর বাড়ির সুরম্য এই ভবনটির আর কোনো নাম তিনি দেননি।  কেনো কোনো নাম দেননি রুচিশীল এই সফল মানুষটি। হেঁয়ালি করেছিলেন, নাকি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন, ‘আশির ফের!’

আশি শব্দটা দুই অর্থে ব্যবহৃত। একটি গাণিতিক অর্থে আশি, আরেকটি আসি বা আসছি।

এই দন্ত’স যুক্ত আসি বিদায় অর্থে বহুল প্রচলিত। অর্থাৎ, চলে যাচ্ছি। তবে এ যাওয়াই শেষ যাওয়া নয়, ফের দেখা হবে।

বিদায়ের কষ্ট লাঘবে বাংলায় যুগ যুগ ধরে এই আসি শব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যে কারণে অনেকেই বলে থাকেন, ‘যাচ্ছি বলতে নেই, বলুন, আসি’। অর্থাৎ আবার দেখা হবে।

জটিল এই অর্থবহ আশির গোলক ধাঁধায় পুরো দেশবাসীকে রেখে গেলেন সদ্য প্রয়াত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) জনপ্রিয় মেয়র আনিসুল হক। মাত্র ৬৫ বছর বয়সে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।  

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন আনিসুল হক।

এর কয়েক ঘণ্টা পরে তার বাসভবনে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে গিয়ে জানা গেল, খুব শিগগিরই ফেরার কথা বলেই বের হয়েছিলেন ‘আশি’ থেকে। কিন্তু কে জানতো, এই যাওয়াই তার শেষ যাওয়া। আর ফেরা হবে না আশিতে। আর কখনোই ছাদের বাগানের পরিচর‌্যা করবেন না।

প্রাণবন্ত মানুষটি এখন শুধুই স্মৃতি।

নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীর চারতলা ভবনটি গভীর রাত পর‌্যন্ত গম গম করতো। কিন্তু একটি সংবাদ সবকিছু পাল্টে দিয়েছে, পুরোপুরি নিস্তব্ধ। এমনকি নিরাপত্তা প্রহরীদের কণ্ঠেও যেনো আওয়াজ বের হতে চাইছে না।

ফিসফিস করে উত্তর দিলেন নিরাপত্তাকর্মী সোহেল। জানালেন, বাসায় এখন কেউ নেই, শুধু তিনজন গৃহকর্মী ছাড়া। পরিবারের সবাই এখন লন্ডন অবস্থান করছেন। মেয়রের মৃত্যূর খবর শুনে তার কয়েকজন স্বজন এসেছিলেন। কিন্তু তারাও বেশিক্ষণ থাকেননি।

বনানীর এই আশিতে থাকতেন মেয়র আনিসুল হক। ছেলে নাভিদুল হক থাকেন উত্তরার বাসায়। আর একমাত্র মেয়ে থাকেন যুক্তরাজ্যে। সোহেল জানান, সেই মেয়ের বাসায় গিয়েছিলেন পারিবারিক সফরে। সেখানে গিয়েই দুরারোগ্য রোগ ধরা পড়ে। দীর্ঘ দু’মাস মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে না ফেরার দেশে চলে যান ঢাকা উত্তরের এই জনপ্রিয় মেয়র।

আনিসুল হকের মৃত্যুতে দল-মত নির্বিশেষে সকলের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কর্মের মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন। বিশেষ করে ঢাকা সিটির অনেক বিষফোঁড়া সরাতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। যেজন্য নগরবাসী থাকে আজীবন স্মরণ রাখবেন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

তার কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত হয়েছে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করা। নগরীর এই বিষফোড়া কখনো কেউ সরাতে পারবেন- এটা ভাবনার মধ্যেই ছিল না কারো। কিন্তু সেই অভাবনীয় কাজটিই করে দেখিয়ে দিয়েছেন মাত্র দু'বছরেই ডিএনসিসি’র সফল এই মেয়র।

অভিযাত গুলশান-বনানী এলাকা থেকে লক্কর-ঝক্কর বাস সরিয়ে ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু, বিশেষ রঙের রিকশা চালু, যুদ্ধাপরাধী মোনায়েম খানের বাড়ির অবৈধ অংশ উদ্ধার করে সড়ক প্রশস্ত করাসহ তার বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭
এসআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।