কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার নতুন চুলিয়ার চর গ্রামে বসবাস রেজাউল করিম ও তার সহধর্মীনি মর্জিনা আক্তার ভিলার।
কাঁচা-পাকা এবড়ো-থেবড়ো পথ পেরিয়ে নতুন চুলিয়ার চর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এলাচ চাষে স্বপ্ন জয়ে বিভোর এই দম্পতি।
বাড়ির উঠোনেই দুই সহস্রাধিক গাছ ঘিরেই তাদের স্বপ্নের বুনন। স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলে গাছের পরিচর্যায় চালিয়ে যাচ্ছেন অক্লান্ত পরিশ্রমে। মর্জিনা আক্তার ভিলা বাংলানিউজকে জানান, ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাসের পর অভাব-অনটনের সংসারে ঢাকায় পোশাক কারখানায় শুরু করেন কর্মজীবন। এই কর্মজীবন তাকে কাছে টানতে পরেনি। রৌমারী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের জন্মভূমির মাটির টানে ফিরে আসেন এবং দুই একর জমি লিজ নিয়ে নার্সারি করে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে শুরু করেন।
এরপর নতুন ফসল ফলানোর চিন্তার পাশাপাশি মসলার আমদানি নির্ভরতা কমাতে তার স্বপ্ন জাগে সুঘ্রাণযুক্ত এলাচ চাষাবাদের।
১৫০টির মতো গাছে ২০১৫ প্রথম ফলন পেয়েছিলেন দুই কেজি এবং ৪০০টির মতো গাছে ২০১৬ সালে এলাচের ফলন পেয়েছিলেন ৭ কেজি। তবে এবারের ব্যাপক পরিচর্যার কারণে গাছের সংখ্যাও বাড়ায় ফলনও ভালো হবে বলে আশাবাদী তারা।
রৌমারীর এলাচ চাষি রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, উঁচু উর্বর দোঁআশ বা পাহাড়ি মাটি এলাচ চাষের উপযোগী। বাড়ির উঁচু ভিটায় বর্তমানে দুই হাজার এলাচ গাছের পরিচর্যা চলছে। এর ফুল আসা শুরু হবে আগামি ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। ফুল থেকে মসলা পরিপক্ব হতে সময় নেবে ৬ মাস অর্থাৎ, আগস্ট মাসে এলাচ বাজারজাত করা সম্ভব হবে। গাছ থেকে পরিপক্ব এলাচ সংগ্রহ করে ৩/৪ দিন রোদে শুকানোর পর তা ব্যবহারের উপযোগী হয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বছরে প্রতিটি গাছ থেকে ১৫/২০টি করে গাছ বাড়ে। প্রতি শতকে মসলা উৎপাদন হয় ১২/১৫ কেজি। তার বাগানে বর্তমানে দুই হাজার গাছ থেকে আগামী মৌসুমে ৩০ কেজি এলাচ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রতিকেজি এলাচ ২ হাজার টাকা বাজার দরে আয় হবে ৬০ হাজার টাকা। প্রতিবছর যেমন গাছের সংখ্যাও বাড়বে, তেমনি উৎপাদনও বাড়বে। এর পরিচর্যায় খরচ তেমন একটা নেই বলেই চলে। দেড় শতক জমিতে দুই হাজার এলাচ গাছে সার প্রয়োগ ও পরিচর্যায় খরচ হবে মাত্র ৪ হাজার টাকা।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ব্যতিক্রমী এ এলাচ চাষের কথা শুনে কৃষি বিভাগ থেকে আমরা তার বাগান পরিদর্শন করেছি। আরো ভালো ফলনের জন্য পরামর্শও দিয়েছি। তার এ উদ্যোগে আমরা অভিভূত। এলাচ আরো ব্যাপক আকারে চাষ শুরু হলে প্রত্যন্ত এ এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার যেমন উন্নয়ন ঘটবে, তেমনি দেশে মসলার আমদানি নির্ভরতাও কমে যাবে। তবে মসলা চাষে সরকারের সহায়তা ও ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭
এফইএস/আরআর/এএ