শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে শান্তি চুক্তির দু’দশক পূর্তি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির সিংহভাগই বাস্তবায়ন হয়েছে। বিশ্বের আর কোথাও এতো দ্রুত এভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে কি-না, আমার জানা নেই। চুক্তির ৭২ শর্তের মধ্যে ৪৮টিই বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। চুক্তির সবচেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি—ভূমি বিরোধ, সেই জটিলতাও শিগগির সমাধান হবে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে যেভাবে হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়, তেমনি পার্বত্য এলাকায়ও আত্মঘাতী সংঘাত শুরু হয়। একটা সময় ছিল, পার্বত্য এলাকায় গেলেও দুপুর ৩টার মধ্যেই ফিরে আসতে হতো।
‘তখন বুঝলাম পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সমস্যা, এটা রাজনৈতিক সমস্যা। এর সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিই। আওয়ামী লীগের নেতাদের সমন্বয়ে সেল গঠন করি এবং নিজেও উদ্যোগ নিই। এরমধ্যে মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটতো, অগ্রহণযোগ্য ছিল। দ্বন্দ্বটা যেন আরও বাড়ানোর অপচেষ্টা ছিলো। একটা পর্যায়ে আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তি চুক্তি করতে সমর্থ হই। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চুক্তিতে সই করি। ’
এই চুক্তির দুই দশক পূর্তিতে পার্বত্যবাসীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে যারা সংঘাতে জড়িত ছিল, আমরা তাদের অস্ত্র সমর্পণ সুযোগ দিই। স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে আসার সুযোগ দিই। সংঘাতের কারণে যে বাসিন্দারা ভারতে শরণার্থী হয়ে যান, তাদের ফিরিয়ে আনি। তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিই, যেটার দায়িত্ব থাকে আমাদের সেনাবাহিনীর হাতে। চাকরি ছেড়ে যাওয়া অনেককে নীতিমালা শিথিল করে ফের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ দিই।
এ চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে বাধা পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চুক্তির পর আমরা যেদিন অস্ত্র সমর্পণের অনুষ্ঠান করি, সেদিন বিএনপি হরতাল ডাকে। অস্ত্র সমর্পণে বাধা দেওয়া ছিল তাদের উদ্দেশ্য। আমার মনে হয় তারা অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা কতো অপপ্রচার করেছিল, বলেছিল চুক্তি হলে পুরো ফেনী পর্যন্ত ভারতের অংশ হয়ে যাবে। এমনকি ভারতের একটি পতাকাও তারা বানিয়েছিল, যেটা আমাদের গোয়েন্দারা চিহ্নিত করে ফেলেন।
সব বাধা পেরিয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান মেনে সই হওয়া এই চুক্তির উদ্দেশ্য পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়ন, এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নত করা। আজকে সাজেক ভ্যালি পর্যন্ত সরাসরি গাড়িতে যাওয়া যায়। স্বাধীনতার আগে মূল রাস্তা থেকে সাত দিন হেঁটে যেতে হতো সাজেক ভ্যালিতে। এখন যেমন রাস্তাঘাট হয়ে গেছে, তেমনি ওই অঞ্চলের মানুষ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলমূল সব বাজারজাত করতে পারছে।
সরকারপ্রধান পার্বত্যাঞ্চলে উন্নয়নের কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, সেখানে পর্যাপ্ত স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়িয়েছি। রাস্তাঘাট করতে গিয়ে ক’দিন আগেই থানচিতে আমাদের সেনা সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন।
চুক্তির বাইরেও সরকার পার্বত্য জনপদের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাকরির ক্ষেত্রে পার্বত্য-বাসীর জন্য কোটার ব্যবস্থা করেছি। দেশে সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। সেজন্য পার্বত্য জনপদকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করারও ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। যেন আমাদের সন্তানেরা নিজেদের এলাকায় থেকেই পড়াশোনা করতে পারে।
চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে পার্বত্যাঞ্চলের বাসিন্দাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন সরকারপ্রধান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭
এমইউএম/এইচএ/