মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে বাংলানিউজের কাছে স্মৃতিচারণ করে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-১ এর পঞ্চাশোর্ধ পরিচ্ছন্ন কর্মী রহিমা খাতুন।
শুক্রবার (০১ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের বিডিআর মার্কেটের সামনে ডিএনসিসির ২ নম্বর ড্যাম্পিং স্টেশনে কাজ করার সময় কথা হয় এই পরিচ্ছন্ন কর্মীর সঙ্গে।
‘আমরা যে খুব ভোরে উঠে নগরীর পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করতাম, এটা মেয়র সাহেব জানতেন, বুঝতেন। তিনি খুব ভালো লোক ছিলো। আমাগো অনেক সুযোগ-সুবিধা দিছে। আরও সুবিধা দিতে চাইছিল’, বলেন রহিমা খাতুন।
অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে এই পরিচ্ছন্ন কর্মী বলেন, আমি খালি মেয়র সাহেবের ছবি দেখছি কিন্তু তারে সরাসরি কখনও দেখি নাই। সবার মুখে শুনতাম যে মেয়র সাহেব খুব ভালো মানুষ। তাই তারে একবার দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তারে দেখতে পারলাম না!
গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। তার অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মনে।
পরিচ্ছন্ন কর্মী রহিমা খাতুন আরও বলেন, আগে একজন পরিচ্ছন্ন কর্মীর বেতন ছিল ৩ হাজার। তাও ঠিকমতো পাইতো না। মেয়র সাহেব আসার পর থেকে আমাদের বেতন বাড়ছে, সুবিধা বাড়ছে, আমরা পরিচ্ছন্ন কাজ করতে নতুন জিনিসপত্র পাইছি। যে যেমন কর্ম করে তার বেতন মেয়র সেইভাবেই বাড়াইছে।
নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে মেয়র আনিসুল হক খুব গুরুত্ব দিতেন বলে জানান পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।
৯০ দশকে আনিসুল হক বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পান। তৈরি পোশাকখাতের এই ব্যবসায়ী এক সময় এই খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ছিলেন। এছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে ঢাকা উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। মেয়র হিসেবে দায়িত্বের প্রথম দিনটি থেকে ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। তার কর্ম পদ্ধতি, সততা ও সুন্দর আচার-ব্যবহারের সুফলও পেয়েছে নগরবাসী।
ডিএনসিসির প্রায় অসম্ভব অনেক কাজ মেয়র আনিসুল হকের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে সেখানে রাস্তা নির্মাণ, যা ইতিপূর্বে কোনো মেয়র-ই এ কাজ করার উদ্যোগ নিতে পারেননি।
ডিএনসিসির অঞ্চল-১ এর উত্তরা-৬ নম্বর সেক্টরের ২নং ডাম্পিং স্টেশনের সুপারভাইজার নিখিল বাবু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এক মিটিংয়ে মেয়র সাহেব বলেছিলেন, আপনারা কাজ করেন। কাজে কোনো গাফিলতি করবেন না। আমি আপনাদের পাশে সব সময় থাকবো। আপনাদের কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন, আমার সহযোগিতা পাবেন।
‘স্যার এত ভালো একজন মানুষ ছিলেন, তার কাছে আমরা যেকোনো সমস্যা নিয়ে গেলে সে সহায়তা করতো। কিন্তু এই ভালো মানুষটা আজ আমাদের মাঝে নেই’, বেদনার্ত কণ্ঠে যোগ করেন নিখিল।
তিনি বলেন, মেয়র সাহেব আমাদের মাথার উপর ছায়া হিসেবে ছিলেন। আজ তিনি নেই, মনে হচ্ছে মাথার উপর থেকে সেই ছায়াটা চলে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭
এসজেএ/এমজেএফ