ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেয়রকে ছাপিয়ে ব্যক্তি আনিসুল হক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৭
মেয়রকে ছাপিয়ে ব্যক্তি আনিসুল হক নগর ভবনের ফটকে নিরাপত্তা কর্মীদের বিশ্রামের জন্য রাখা এই চেয়ারে বসে তাদের খোঁজখবর নিতেন মেয়র আনিসুল; ছবি- শাকিল

ঢাকা: বিভক্ত ঢাকার উত্তরাংশের প্রথম মেয়র আনিসুল হক। তৈরি পোশাক শিল্পের প্রসিদ্ধ এ উদ্যোক্তা দেশের ব্যবসায়ী সমাজকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে।

২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতিও নির্বাচিত হন তিনি।

তবে আনিসুল হক বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন ২০১৫ সাল থেকে। ওই বছর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন ব্যবসায়ীদের এ নেতা।

এরপর থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভিন্ন উদ্যোগ, কাজ এবং উক্তির মাধ্যমে বার বার আলোচনায় সমালোচনায় আসেন তিনি। তবে রাজনীতিতে এসে তার সমালোচনা হলেও এ নগর পিতার ব্যক্তিগত ব্যবহারে মুগ্ধ সবাই।

জীবনের প্রতিটি বাঁকে অভাবনীয় এক ভালোবাসার শক্তি দিয়ে দেশের ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, অভিনেতা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ মানুষ প্রত্যেকের মন জয় করেছেন সদা হাস্যজ্বল এই কর্মপ্রেমিক। আর এ কারণেই তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে শোকের ছায়া নেমে এসেছে নগরজুড়ে।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ২ টায় গুলশানস্থ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়ের নিচতলায় অশ্রুসিক্ত দুই নিরাপত্তা কর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেলো সদ্য প্রয়াত মেয়রের মহানুভবতার কথা।

কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী রিপন চন্দ্র বর্মন বাংলানিউজকে বলেন,‘এই কার্যালয়ের যেদিন উদ্বোধন হয়েছে সেদিন থেকেই আমি এখানে দায়িত্ব পালন করছি। প্রথম প্রথম স্যারকে দেখে খুব ভয় পেতাম। কিন্তু স্যার প্রায়ই আমাদের বেঞ্চে এসে বসতেন। খোঁজ খবর নিতেন। আর বলতেন কারো সাথে দুর্ব্যবহার করবা না, মানুষকে বুঝিয়ে বলবা, তোমাদের কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবা।

কথাগুলো বলতে বলতে গলাটা ধরে আসে রিপনের। দু’চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়াতে শুরু করে।  ডিএনসিসির দুই নিরাপত্তা কর্মী রিপন ও আমিনুল ধরা গলায় রিপন বলেন, স্যার এতো বড়ো একজন মানুষ কখনো বুঝতে দিতেন না, নিজের ভিতরে কোনো অহংকার ছিলো না। আমাদের সাথে এক টেবিলে বসে ইফতারি করেছেন। রমজান মাসে প্রতিদিন প্রত্যেককে ১শ’ করে টাকা দিতেন ইফতার করতে।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের রেখে যাওয়া আনিসুল হকের কয়েকটি ছবি দেখিয়ে রিপন বলেন, স্যারের ছবিগুলো এখানে রেখে গেছে, দেখে খুব খারাপ লাগছে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। এজন্য ছবিগুলো উল্টে রেখেছি।

আমিনুল হক নামের আরেক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, স্যারের কি হলো বুঝতেই পারলাম না। ভালো একজন মানুষ নাতিকে দেখতে গেলেন আর কি এমন হলো যে স্যার মারা গেলেন। আগে কখনো দেখিনি স্যার অসুস্থ ছিলেন। সব সময় কাজ করতেন। যেকোনো কাজে নিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন। তবে একদিন দেখেছি স্যার বাইরে রোদের মধ্যে রাস্তার কাজ করে অফিসে আসেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় দুই জনে ধরে স্যারকে বাইরে নিয়ে যায়।

এর আগে কথা হয় আনিসুল হকের বনানীস্থ বাসভবনের নিরাপত্তাকর্মী আমিনুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আমরা তো কর্মচারী। তবুও আমাদের সাথে বাবা ছাড়া কথা বলতেন না। বাসা থেকে বাইরে যাওয়ার সময়, ফেরার সময় শুনতেন আমরা খেয়েছি কিনা, কোনো সমস্যা আছে কিনা। অনেক সময় দেখতাম বিপদে পড়ে অনেকে স্যারের কাছে আসতো। স্যার প্রত্যেকের কথা শুনতেন এবং সাহায্য করতেন।

জীবনের ধাপে ধাপে সফল এই মানুষটি ১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৫ বছর বয়সে গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০.২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

সেখানে প্রথম জানাজা শেষে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ ঢাকায় আনা হচ্ছে। ফ্লাইটটি শনিবার বেলা ১টার দিকে ঢাকা পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৭
এসআইজে/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।