শুধু কিশোরগঞ্জেরই নয়, রিকশা পুরো দেশেরই অন্যতম যানবাহন। যেকোনো শহরে, এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও দেখা যায় স্থানীয় ও স্বল্প দূরত্ব অতিক্রমের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এ বাহনটি।
অথচ বর্ণাঢ্য ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে তিন চাকার রিকশার। পোপ ফ্রান্সিস তার চলমান বাংলাদেশ সফরে রিকশায় চড়ে যানটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন, যেমনটি অতীতে আরও অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্বও দিয়েছিলেন। রিকশার সমঝদারি করেছেন- এমন গুণি মানুষের তালিকাও দীর্ঘ। কিন্তু রিকশার কারণে বিড়ম্বনার শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়।
দেশের সর্বত্রই রিকশার যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে। দেশি নৌকার মতোই রিকশায়ও লাগানো হয়েছে শক্তি উৎপাদনকারী মোটর। সারা দেশের মতোই কিশোরগঞ্জেও সমানতালে চলছে মানুষচালিত বা যন্ত্রব্যবহৃত রিকশা।
‘রিকশা’ শব্দটি এদেশে এসেছে জাপানি ‘jinrikisha’ শব্দ থেকে৷ ‘jin’ অর্থ মানব ‘Riki’ অর্থ শক্তি আর ‘sha’ অর্থ বাহন৷ অর্থাৎ মানবশক্তি চালিত যানবাহন৷ কিন্তু সেই রিকশাই এখন বেপরোয়া গতি ও বিশৃঙ্খলার জন্য কোথাও কোথাও জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘রিকশার কারণেই গৌরাঙ্গ বাজার, পুরান থানা, বড় বাজার, হাসপাতালের মোড়ে ঢাকার গুলিস্তানের মতো জট লেগে যায় প্রায়ই’- যেমনটি বলছিলেন কিশোরগঞ্জ শহরের প্রবীণ নাগরিক আশরাফ খান।
প্রথমে দুই চাকার টানা রিকশা হিসাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাহনটির৷১৮৯০ সালে আমেরিকান নারী বেট্টি গৰ্ডন এই রিকশা চালনা মন্থর ও Tearful job আখ্যা দিয়ে বর্তমান প্যাডেলচালিত তিন চাকার রিকশা আবিষ্কার করেন৷ তিনি টানার পরিবর্তে ওই স্থানে বাইসাইকেল বেঁধে প্যাডেল করে চালাতে শুরু করেন৷ যা আধুনিক তিন চাকার রিকশায় পরিণতি পায়৷
উপমহাদেশে প্রথম রিকশা চালু হয় সিমলায় ১৮৮০ সালে৷ কলকাতায় আসে ১৯০০ সালে৷ বাংলাদেশে ১৯১৯ সালে প্রথম চট্টগ্রামে আসে মিয়ানমার থেকে৷ ঢাকায় রিকশা আসে ১৯৩৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর থেকে।
এ দেশে প্রথম রিকশার বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় ১৯০৪ সালে নারায়নগঞ্জ ও নেত্রকোনায়৷ তৎকালীন বিদেশি পাট রফতানিকারকরা নিজেদের ব্যবহারের সুবিধার্থে এটির আমদানি করেন৷
১৯৪৪ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন জনপরিবহন হিসেবে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে৷ বৰ্ধিষ্ণু জনসংখ্যায় ক্ৰমবর্ধমান জনপরিবহনের চাপে ১৯৮৭ সালে বন্ধ করা হয় লাইসেন্স দেওয়া৷ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি শহরে রিকশা চলাচল সীমিত করা হয়, কোনো কোনো রাস্তায় বন্ধও করা হয়। এতেও কমছে না যানজট।
শখ করে রিকশায় চড়েন বিদেশিরাও৷ আশির দশকে ফ্রান্সের একদল গবেষক বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে রিকশা নিয়ে গবেষণা করে অনেক তথ্য উপস্থাপন করেন৷ ‘বাংলাদেশের রিকশা: চলমান আর্ট গ্যালারি’তে সেসব তথ্য উপস্থাপিত হচ্ছে।
গবেষণায় জানা গেছে, একজন রিকশাচালক একটানা সর্বোচ্চ ৩০-৪০ ৪০ কিলোমিটার চালাতে সক্ষম৷ গড় গতিবেগ ১০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। কিন্তু যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক রিকশার গতির তারতম্য রাজপথে দুর্ঘটনার কারণে পরিণত হচ্ছে। বড় শহরে রিকশা বন্ধ বা সীমিত হওয়ায় অপেক্ষাকৃত ছোট শহরে রিকশার ভিড় বাড়ছে, তৈরি হচ্ছে অসহনীয় যানজট।
কিশোরগঞ্জের শিক্ষিকা কল্পনা রাণী পাল যেমন বলেন, ‘রিকশা, অটোরিকশা, ভাসমান হকারের জটলার কারণে হেঁটেও স্বস্তিতে চলাচল করা যাচ্ছে না। শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই’।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৭
এমপি/এএসআর