শহরায়নের ছোঁয়ায় উজার হচ্ছে মাদারীপুরের খেজুর গাছ। প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে রস সংগ্রহ।
মাদারীপুরের মস্তফাপুর। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে শীত মৌসুম থেকে অর্ধ বছরই খেজুর গুড়ের বাহারি পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। এখানের অতীত সুনাম এখনো টিকে আছে খেজুর গুড়ের ব্যবসায়। তবে এখন ‘গুড়ের স্বাদে’ রয়েছে চিনির মিশ্রণ!স্থানীয়রা জানায়, খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় রস সংগ্রহও কমে গেছে। এছাড়া গাছে এখন রসও কম হয়। এ কারণে মিঠাই বাড়াতে চিনির মিশ্রণ হচ্ছে। এতে গুড় বেশিদিন সংগ্রহে রাখা যায়। লাভও একটু বেশি হয়।
মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশের খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমছে। সড়ক সংস্কার কাজের কবলে পরেও অনেক খেজুর গাছ উজার হয়ে গেছে। এছাড়াও এক সময়ে ইটের ভাটায় অবাধে গাছ পোড়ানোর প্রবণতা ছিল।
মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার শ্রীকৃষ্ণদি এলাকার গাছি রাজ্জেক মিয়া বাংলানিউজকে জানান, পান্তাপাড়া-শ্রীকৃষ্ণদি এলাকার রাস্তার পাশ দিয়ে ১০-১২ বছর আগেও অসংখ্য খেজুর গাছ ছিলো। বিক্রি ও মরে যাওয়াসহ নানা কারণে এখন আর তেমন দেখা যায় না খেজুর গাছ। সে সময় প্রতিদিন সকালে হাঁড়ি ভরে রস সংগ্রহ করা হতো। বাড়িতেই মিঠাই তৈরি করা হতো। তারপর এলাকার বাজারে বিক্রি হতো সেই মিঠাই।
তিনি বলেন, ‘এখন গাছও কম, রসও কম। মিঠাই যা বানানো হয়, তা বিক্রি করার মতো হয়ে ওঠে না। তবে অনেকেই খাঁটি খেজুরের গুড়ের জন্য বাড়িতে আসেন। আগে অর্ডার দিলে খেজুরের গুড় বানিয়ে দেই। ’
অপর আরেক গাছি বলেন, ‘এখন আগের মতো রস পড়ে না। তাছাড়া বাদুরের উৎপাত এখন বেশি। অনেক গাছ এখন কাটাই হয় না। রস তেমন না পড়ায় আমাদের আগ্রহও কমে গেছে। এক সময় শীত মৌসুমে আমাদের আয়ের পুরোটাই আসতো খেজুর গুড় তৈরিতে। এখন সেটা নেই। ’তারপরও জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো টিকে আছে মলিন কিছু খেঁজুর গাছ। আর তার উপরই নির্ভর করে টিকে আছে খেজুর গুড়ের উৎপাদন। গুড়ে ভেজাল আসলেও খাটি গুড়ও পাওয়া যাচ্ছে কোনো কোনো গ্রামীণ বাজারে। রকমভেদে এ সকল গুড়ের দামও হয় ভিন্ন। মান অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় এ গুড়। ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, খাণ্ডা গুড়, ঝরার গুড় ও নলেন গুড় এ অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়।
কলেজ শিক্ষক তাজুল ইসলাম ঠাণ্ডু ফরাজী বাংলানিউজকে বলেন, ‘খেজুরের গাছ এখন চোখে পড়ে না বললেই চলে। অথচ খেজুরের গুড় শীত মৌসুমের লোভনীয় খাবার। যে হারে গাছ উজার হচ্ছে, সে হারে গাছ লাগানো হচ্ছে না। অন্যান্য গাছের পাশাপাশি বাড়ির আশপাশে বা রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগানো দরকার। তবেই আবার ফিরে আসবে খেজুর রস ও গুড়ের হারানো ঐতিহ্য। ’
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক জিএম গফুর বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাদারীপুরের খেজুর গুড়ের চাহিদা ব্যাপক। দেশে এর সুনাম রয়েছে। খেজুর গাছ যেনো বিলুপ্ত না হয় আমরা কৃষকদের সেই পরামর্শ দিচ্ছি।
বাড়ি ও রাস্তার পাশে অধিক হারে খেজুর গাছ লাগানো উচিত বলে স্থানীয় কৃষকদের তারা পরামর্শ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৭
টিএ