দিনটি উপলক্ষ্যে রোববার (৩ ডিসেম্বর) উদীচী ঠাকুরগাঁও জেলা সংসদ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হতে নিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেওয়া হয়েছে নানান কর্মসূচি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁয়েও পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চালায় নির্যাতন। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনে মেতে ওঠে তারা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাটিভাঙ্গা ও রানীশংকৈল খুনিয়াদীঘি পাড়ে মুক্তিকামীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ১৭ এপ্রিল জগন্নাথপুর, গড়েয়া শুখাপনপুকুরী এলাকার কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষ ভারত অভিমুখে যাত্রাকালে স্থানীয় রাজাকাররা তাদের আটক করে। তাদের পাথরাজ নদীর তীরে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়।
একইভাবে রানীশংকৈল উপজেলার খুনিয়াদিঘীর পাড়ে গণহত্যা চালানো হয়। পাকবাহিনী হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার নিরিহ মানুষজনকে লাইনে দাঁড়িয়ে গুলি করে মারে। মানুষের রক্তে এক সময় লাল হয়ে উঠে এ দিঘির পানি। পরবর্তিতে খুনিয়াদিঘি নামে পরিচিতি পায়।
এদিকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও। সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষরাও। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ।
ঠাকুরগাঁও তখন ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম. খাদেমুল বাশার। ২৯ নভেম্বর এই মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়।
২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াইয়ে সে রাতেই শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটতে শুরু করে। অবস্থান নেয় ২৫ মাইল নামক স্থানে। ৩ ডিসেম্বর ভোররাতে ঠাকুরগাঁও শহর শত্রুমুক্ত হয়। সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের জনপদ। হাজার হাজার মানুষ উদ্বেলিত কন্ঠে ‘জয় বাংলা’ বলতে বলতে মুক্ত শহরের রাস্তায় বের হয়ে আসে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাতিভাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযুদ্ধ আব্দুল করিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, দেশ হানাদার মুক্ত হয়েছে, কিন্তু এদেশে এখনো রাজাকার মুক্ত হয়নি। তাই সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে বারবার। এদের প্রতিহত করতে এখনই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল আওয়াল বলেন, ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত হয়। ঠাকুরগাঁয়ের সর্বস্তরের মানুষ এই দিনটিকে উদযাপন করে থাকেন।
স্থানীয় রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে অঞ্চলভিত্তিক ইতিহাস সংরক্ষণের কথা জানান ঠাকুরগাঁও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর।
ঠাকুরগাঁও উদীচীর সভাপতি ও উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদ সদস্য সেতারা বেগম বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সংরক্ষণ করা হয়নি অনেক গণকবর। আর যেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে তাও পড়ে আছে অবহেলা আর অযত্নে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৭
এইচএমএস/জিপি