ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ওই মিয়া ভাত খাইয়া যাও...

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
ওই মিয়া ভাত খাইয়া যাও... রাজধানীতে এভাবেই ভাত বিক্রি করছেন ভাসমান দোকানিরা- ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ঘড়ির কাটায় শনিবার (০২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ২টা বেজে ১০ মিনিট। রাজধানীর মতিঝিল রাজউক এভিনিউ গোল চত্বরে রাস্তার উপরে হাড়ি-পাতিল নিয়ে বসে আছেন কয়েকজন নারী। ডাক ছাড়ছেন ওই মিয়া ভাত খাইয়া যাও। 

আর তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন বিকশা চালক ও ছিন্নমূল মানুষেরা।   ভাত, মাছ, ডিম ও মাংসের তরকারি রান্না করে রাতে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন এসব ভাসমান ভাত বিক্রেতারা।

 

রাত যত গভীর হয় রাজধানীর প্রায় সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়।  এক সময় নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে নগরীর সড়কগুলো। বন্ধ হয় যায় খাবারের হোটেলগুলোও। ঠিক তখন ভাসমান ভাত বিক্রেতারা তাদের হাট জমান রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায়। আর তেমনি এক জায়গা রাজধানীর মতিঝিল রাজউক এভিনিউ চত্বর।  

ভাসমান ভাত বিক্রেতা জাহেদা খাতুন চার ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ফকিরাপুলের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। বছর পাঁচেক আগেই তার স্বামী মারা যান। বছরে একবার সিলেটে তার গ্রামের বাড়িতে গেলেও সংসারের খরচ জোগাতে কয়েকদিন থেকেই চলে আসেন ঢাকায়।  

নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে খাবার বিক্রি করেন তিনি। বাসা থেকে ভাত মাছ, ডিম, মাংস রান্না করে বিক্রি করতে প্রতিদিন রাতেই নিয়ে আসেন মতিঝিলে।  

তিনি বলেন, রোডে মানুষ কি সুখে থাকে? আমাগো কাম কইরা খাইতে হয় গো বাজান। হোটেল খুইলা বসার সামর্থ্য নাই তাই বাসা থেকে রাইন্দা (রান্না) নিয়ে আসি।  
রাজধানীতে এভাবেই  ভাত বিক্রি করছেন ভাসমান দোকানিরা- ছবি: জিএম মুজিবুর  ছেলে-মেয়ে লেখা-পড়া করে। বড় ছেলে সাইফুল এবার মেট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষা দেবে। টাকা পয়সা সব জমা দিছি। ভাত না বেচলে মুশকিলে পইড়া যামু।

‘প্রতিদিন রাত ৮টার দিকে আসি। বিক্রি হলে বাসায় যাই। তবে আইজ সব বেচা হয় নাই, লোক কম। ’     

হঠাৎ চিৎকার করে এক রিকশা চালককে বললেন- ‘ওই মিয়া কই যাও? ভাত খাইবা না? তরকারি-ভাত গরম আছে। ’   

শীতের রাতে গরম খাবারের কথা শুনে সামনে এসে রিকশা থামালেন চালক। তার নাম রুবেল। মাথায় ক্যাপ আর চেকের একটি চাদর গায়ে মোড়ানো রিকশা চালক হাত ধুয়ে একটি প্লেটে করে ভাত আর মাছ নিয়ে খেতে শুরু করলেন।  

খুব মজা করে খাচ্ছিলেন এই রিকশা চালক। খেতে খেতে বলতে থাকেন- ‘মাছের তরকারি তো আজ অনেক মজা হইছে। ’ 

রিকশা চালক রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, আমি সব সময় রাতেই গাড়ি চালাই। আর এই সময় হোটেল খোলা থাকে না। ক্ষুধাও লাগে। তাই রোজই চাচীর কাছে খাই। ৪০/৪৫ টাকায় হয়ে যায়।  

ভাসমান এই ভাত বিক্রেতারা স্বল্প মূল্যে খাবার বিক্রি করেন। মাছ-ভাত ৪০ টাকা, ডিম-ভাত ৩০ টাকা, মাংসা-ভাত ৫০ টাকা (গরুর মাংস, মুরগীর মাংস)।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর, ০৩, ২০১৭
এসজেএ/বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।