ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টাকার অভাবে রাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত দিপকের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
টাকার অভাবে রাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত দিপকের দিপক ও তার মা কিরণ বালা। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালমনিরহাট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দিপক কুমারের।

দিপক লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব-নওদাবাস গ্রামের মৃত দোলচাঁদ চন্দ্র বর্মনের ছেলে।

জন্মের তিন বছরের মাথায় তার বাবা মারা যান।

বাবার মৃত্যুর পর মায়ের ঝিঁয়ের কাজ করা আয়ে অনাহারে অর্ধাহারে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন দিপক। সংসারে অভাব থাকলেও পড়াশুনার প্রতি ঝোঁক ছিলো তার। পাড়ার অন্য ছেলেদের সঙ্গে দলবেধে গ্রামের পূর্ব নওদাবাস আফসার উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেন। সেখানে তিনি সমাপনীতে মেধাবী হিসেবে মেধার স্বাক্ষর রাখেন।

এরপর ভর্তি হন নওদাবাস কেএমএসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানেও কৃতিত্বের সঙ্গে জেএসসি ও ২০১৪ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ নিয়ে সবাইকে হতবাক করে দেন। মায়ের আয় দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া সম্ভব ছিলো না। তাই দিপক নিজেই দিনমজুরের খাতায় নাম লেখিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি কৃষি শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ শুরু করেন।

ভর্তি হন হাতীবান্ধা মডেল কলেজে। সেখানে এইচএসসিতে অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.০৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। আত্মপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নটাও অনেক বড় হয়ে দেখা দেয় দিপকের। তাই দিনমজুরী আয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেন দিপক। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ইউনিট থেকে ২৮৮, ই-ইউনিটে ৩০১ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি ইউনিট থেকে ৫৮০ মেধাস্থান অর্জন করেন।

ভর্তির সুযোগ হলেও বাধা হয়ে দাড়ায় অভাব নামক দানবটি। এ দানবকে হটাতে অন্যের জমিতে দিনমজুরী কাজ বাড়িয়ে দেন তিনি। রাবিতে ভর্তি হতে প্রয়োজন ১৫ হাজার টাকা। অক্লান্ত পরিশ্রম করে রাবিতে ভর্তি হতে তিন হাজার টাকা যোগাড় করেছেন তিনি। বাকি ১২ হাজার টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবেন তা নিয়ে চিন্তিত দিপক। এদিকে রাবিতে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে ভর্তি হতে হবে। বিলম্ব হলে তার ভর্তির সুযোগ বাতিল বলে গণ্য হবে।  

দিপক বাংলানিউজকে বলেন, অনেক চেষ্টা করে তিন হাজার টাকা যোগাড় করেছি। কিন্তু বাকি টাকা যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। চারদিনের মধ্যে বাকি টাকা যোগাড় করতে না পারলে তিনি আর ভর্তি হতে পারবেন না।

দিপকের মা কিরণ বালা বাংলানিউজকে বলেন, শরীরের রক্ত পানি করে বুড়ো বয়সে ঝিঁয়ের কাজ করে দিপককে পড়িয়েছি। শেষ বয়সে এসে ছেলের মুখে হাসিটা দেখতে পারলাম না। ছেলের মুখে হাসি ফোটাতে কেউ কি আমাকে ভিক্ষা দেবে বাবা?

হাতীবান্ধা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, দিপক অত্যন্ত মেধাবী, পরিশ্রমী ও জেদি ছেলে। সে কোথাও সুযোগ পেলে ভালো কিছু করতে পারবে। এজন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৭
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।