রোববার তারেক মাসুদের ক্ষতিপূরণ মামলায় ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণার পর এমন মন্তব্য করেন ক্যাথরিন মাসুদ।
ক্যাথরিন মাসুদ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি তারেককে আর পাবো না।
তিনি বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে আইনগতভাবে স্বীকৃত হচ্ছে যে, এই তথাকথিত দুর্ঘটনা আসলে দুর্ঘটনা নয়। এই সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর পেছনে ড্রাইভারদের দায় আছে, কোম্পানির দায় আছে, বাস কোম্পানির দায় আছে, এমনকি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, তাদেরও দায় আছে।
এ আইনে প্রথম বারের মতো প্রতিকার পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আইনের অধীনে আমরা প্রথমবারের মতো প্রতিকার চেয়েছি। এখন থেকে আশা করছি নিয়মিতভাবে অনেকে ক্ষতিপূরণ পাবে। এটা আমার আন্তরিক বিশ্বাস যে, যদি আমরা সমাজ হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে বড় হতে চাই, তাহলে একটা ফেয়ার এন্ড জাস্টিস আইনের প্রক্রিয়া স্থাপন করতে হবে। যার মধ্য দিয়ে, যাদের শক্তি বেশি তাদেরকে দায়বোধ করাতে পারবো তাদের দায়িত্বহীন ও বেপরোয়া কাজের জন্য। আজকে একটা আইনের প্রক্রিয়ায় বড় পদক্ষেপে এগিয়ে আছি।
আপনি সন্তুষ্ট কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ক্যাথরিন বলেন, জি।
এর আগে তার আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, আইন অনুসারে জেলা পর্যায়ে একটি ট্রাইব্যুনাল থাকার কথা। প্রতিনিয়ত যারা মারা যাচ্ছে তারা এখানে এসে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে না। আদালত আশা করছেন ওনারা (ক্ষতিগ্রস্তরা) এখন আসতে পারবেন। ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।
তিনি বলেন, আদালত একটি মন্তব্য করেছেন, একেক জনের আয় তো ভিন্ন হবে, কিন্তু স্নেহ বা ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয় সেক্ষেত্রে সবার জন্য একই মাপকাঠিতে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।
২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দু’টি মামলা করেন।
সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে এ দু’টি মামলা হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়।
তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও ছেলে সুহৃদ মুনীর দু’টি আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এ রুলের শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর দুই আবেদন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।
পরে বিচারপতি জিনাত আরার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলা দু’টি শুনানির জন্য আসে। এর মধ্যে তারেক মাসুদের মামলার শুনানি শেষ হয়। অপরটি শুনানির জন্য মুলতবি রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
ইএস/জেডএম