আর এই স্বপ্ন পূরণে রাতদিন নগরবাসীকে সাথে নিয়ে ছুটেছেন উত্তর ঢাকার অলিতে গলিতে। কিন্তু সব চেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এই ছোটাছুটির কাজে তিনি কখনো সরকারি অর্থ ব্যয় করেননি।
নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি আর নিজের গাড়িচালক নিয়েই ছুটতেন তিনি। এমনকি গাড়ির তেল খরচও দিয়েছেন নিজস্ব পকেট থেকেই।
সবচে অবাক করা তথ্যটি হচ্ছে, আনিসুল হক মেয়র হিসেবে যে টাকা বেতন হিসেবে পেতেন তার পুরোটাই তিনি নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরদের মাঝে বণ্টন করে দিতেন।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) নগরভবনে বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানালেন সদ্যপ্রয়াত মেয়রের একান্ত সচিব একেএম মিজানুর রহমান।
বাংলানিউজকে মিজানুর বলেন, ‘অফিসের নিজস্ব যে সিকিউরিটি, তার খরচও স্যার নিজের টাকা দিয়ে মেটাতেন। আমাদেরকে সব সময় বলতেন কখোনো করো থেকে চার আনা পয়সা নিবা না। টাকা লাগলে আমাকে বলবা। স্যার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের আলাদা ভাতা দিতেন। তাছাড়া আমরা যারা দিনরাত তার সঙ্গে পরিশ্রম করতাম, এমন ৯ জনের মাঝে প্রতি মাসের বেতন বন্টন করে দিতেন।
মিজানুর রহমান বলেন, এখানে ৬/৭ জন আর্কিটেক্ট ছিলেন। যারা শহর নিয়ে প্ল্যানিং করতেন। তাদের বেতনও তার নিজের মোহাম্মাদী গ্রুপ থেকেই দিতেন স্যার। সিটি কর্পোরেশনের বিধিতে তাদের বেতন দেয়ার নিয়ম ছিলো না। কিন্তু স্যার কাজটা নিজের মতো করবেনই করবেন! আর তা করতে হলে লোক তো দরকার। এজন্য নিজের টাকায়ই পরিকল্পনার কাজে লোক নিয়োগ দিয়েছিলেন স্যার। আমরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কমলোক নিয়ে, মাত্র ৪২% ম্যানপাওয়ার নিয়ে, কাজ করেছি।
মিজানুর আরো বলেন, ‘স্যার মেয়র হয়েও নিজের টাকায় গাড়ি চালাতেন। নিজের ড্রাইভার, নিজের তেল। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, এক কাপ চা স্যার সিটি কর্পোরেশনের টাকা থেকে খাননি। যদি কখনো কোনো প্রোগ্রাম হতো তখন সকলের সাথে যেটুকু খরচ করতে হতো ততটুকুই খরচ করতেন। তার বাইরে নয়। তাছাড়া নিজের আপ্যায়নের জন্য স্যার প্রতি মাসে আমাদের কাছে টাকা দিয়ে রাখতেন। সেটা দিয়েই স্যারের অতিথি, স্যারের আপ্যায়ন করা হতো।
মাত্র দুই বছরের দায়িত্বে ‘যেখানে সমস্যা সেখানেই সমাধান’ নীতিতে চলতে গিয়ে বহু বাধার মুখে পড়তে হয়েছে মেয়র আনিসুল হক স্যারকে। কিন্তু কখনো থেমে যাননি। থমকে যাননি। পিছিয়ে আসেননি। নিজে যেমন বিচলতি হননি, তেমনি সহকর্মীদেরকেও কিছু বুঝতে দেননি। বহু ক্ষেত্রে বড় বড় রাঘব বোয়ালদের সাথে পাল্লা দিতে, টক্কর দিতে হয়েছে তাকে। তবু দমে যাননি। কঠোর পরিশ্রম আর মেধার জোরে সব সময় হয়েছেন বিজয়ী।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত থামতে হলো তাকে। তার সেই পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আলোকিত আর মানবিক ঢাকা গড়ার স্বপ্নটা হঠাৎ থমকে গেল। গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন ৬৫ বছর বয়সী এ স্বপ্নদ্রষ্টা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
এসআইজে/জেএম