আগের চেয়ে ৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। চলমান প্রকল্পটির মেয়াদ আগের মতোই রয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
বাপাউবো সূত্র জানায়, আগাম, অতি বা দীর্ঘস্থায়ী বন্যার হাত থেকে হাওর এলাকার বোরো ধানের ক্ষতি ঠেকাতেই নতুন প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।
তবে প্রকল্পটির চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে- মেঘনা নদীর উজানে অতি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে হাওর এলাকাকে বন্যা থেকে রক্ষা করা। কৃষি ও মৎস্য কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে এলাকার জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী(উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট) কে এম আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অতিবৃষ্টির ক্ষয়-ক্ষতির কথা মাথায় রেখে হাওর এলাকা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। আগে থেকেই ‘হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন’ প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এর পাশাপাশি ধান ও গবাদিপশু রক্ষায় ৯৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ডুবন্ত বাঁধের আকৃতি ফিরিয়ে আনা ও পুনর্নির্মাণ এবং হাওরে কম্পার্টমেন্টাল ডাইক, ক্রসবাঁধ, পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, ড্রেনেজ আউটলেট, গেটেড স্ট্রাকচার ও ইরিগেশন ইনলেট তৈরি ছাড়াও সুরমা ও বৌলাই নদী খনন ও অভ্যন্তরীণ খাল পুনর্খনন করা হবে।
বোরো ধান রক্ষা প্রকল্পের আওতায় ২৬৬ কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করা হবে। ৭৫ কিলোমিটার খাল পুনর্বাসন করা হবে। ৪২টি রেগুলেটর, সেতু, কালভার্ট ও বক্স স্লুইসও নির্মাণ করা হবে।
কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপজেলাগুলোতে বাস্তবায়িত হবে প্রকল্পটি।
উপজেলাগুলো হচ্ছে- কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ সদর, কটিয়াদি, পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর, করিমগঞ্জ, নিকলি, ইটনা, মিঠামইন, তাড়াইল ও অষ্টগ্রাম, ময়মনসিংহের নান্দাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, নেত্রকোনার পূর্বধলা, নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, মদন, কেন্দুয়া ও আটপাড়া, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর, সিলেটের দোয়ারাবাজার, সিলেট সদর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানিবাজার, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার সদর এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং।
বাপাউবো সূত্র জানায়, মেঘনা নদীর ওপরের বেসিনে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এলাকার জেলাগুলোর প্রায় ৮ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার হাওর এলাকা বর্ষা মৌসুমে ডুবে যায়। কৃষি ও মৎস্য এসব এলাকার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। হাওরে প্রতি বছর গড়ে ৫৩ লাখ মেট্রিকটন বোরো উৎপাদিত হয়, যা দেশের বার্ষিক মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ১৬ শতাংশ। বর্ষা পূর্ব মৌসুমে ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে ভারতের অতি বৃষ্টিপাতে হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়।
ফলে একদিকে যেমন ধান উৎপাদনে ক্ষতি হয়, অন্যদিকে তেমনি এলাকার জনগণের জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটে।
সূত্র জানায়, গত প্রায় ছয় বছর ধরে চলমান আগের ‘হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চরম অবহেলা লক্ষ্য করা গেছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন মেয়াদে হাওরের বাঁধগুলো সংস্কারের কথা ছিলো। মোট বরাদ্দ ছিল ৬৮৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে যথাসময়ে কাজগুলো সম্পন্ন হতে পারেনি। ফলে হাওরগুলোতে নেমে আসে বিপর্যয়।
এরই মধ্যে বরখাস্ত হয়েছেন সুনামগঞ্জের প্রধান প্রকৌশলী ছাড়াও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিন প্রকৌশলী। আগেই জানা গিয়েছিলো, ওই প্রকৌশলীদের যোগসাজশেই সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর