ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গোবর আর কেঁচো থেকে লাখ টাকা আয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৭
গোবর আর কেঁচো থেকে লাখ টাকা আয় দাগনভূঞাঁ উপজেলার একটি ভার্মি কম্পোস্ট শেডে পরিচর্যা করছে কৃষক।

ফেনী: দাগনভূঞাঁ উপজেলার হাসান গনিপুর গ্রামের দ্বীন মোহাম্মদ। বাড়ির পাশে দুধ উৎপাদনকারী ৬০ টি হলেস্টেইন ফ্রিজিয়ান গরু নিয়ে পরিচালনা করেন ডেইরি খামার। প্রতিমাসে তার ডেইরি খামার থেকে আসে প্রায় ২ টন গোবর। এ গোবরগুলো ফেলে দেয়া হতো পাশের খালে।

এলাকাবাসী খামারটির বিরুদ্ধে খাল ভরাটের অভিযোগ করে। এ সময় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. আবদুল্লাহ আল মারুফ সরেজমিন পরিদর্শন করে দ্বীন মোহাম্মদের খামার পরিচালনাকারী গোলাম রহমান নয়নকে গোবরগুলো ফেলে না দিয়ে তা দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরির পরামর্শ দেন।

পরে ওই কৃষি কর্মকর্তার সার্বিক তদারকিতে তৈরি করা হয় শেড। ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিকারী বিশেষ প্রজাতির কেঁচোকৃষি কর্মকর্তা মারুফ জানায় এ খামার থেকে প্রতি তিন মাসে ৪ টন করে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন সম্ভব। প্রতিকেজি ভার্মি কম্পোস্টের বর্তমান বাজার মূল্য ১৫ টাকা। প্রতি তিন মাসে আয় হবে ৬০ হাজার ৯’শ ৬০ টাকা। বছরে আয় হবে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮’শ ৪০ টাকা। যাবতীয় খরচ বাদ দিলেও বছরে ২ লাখ টাকা থাকবে।

এতো গেল শুরুর গল্প। রয়েছে এ সার তৈরি করে আয় করার আরও দৃষ্টান্ত। উপজেলার নয়নপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এমন একটি খামার। আইডিয়াল ভার্মি কম্পোস্ট নামের প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই এ খাত থেকে বছরে ১ লাখ টাকার মত আয় করছে। একটি শেডে তৈরি হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্টপ্রকল্পের মালিক মো. আকবর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তার একটি ডেইরি খামার রয়েছে। তাতে ১৮টি বিদেশি জাতের রযেছে গরু। সেখান থেকে মাসে দুই টনের মতো গোবর আসে। প্রথমে এসব গোবর দিয়ে তৈরি করা হয় বায়োগ্যাস। এরপর সেই গোবরগুলো দিয়ে তৈরি করা হয় ভার্মি কম্পোস্ট। প্রতি তিন মাসে তাদের খামার থেকে দেড় টনের মত কম্পোস্ট তৈরি হয়। তা থেকে আয় হয় ১৫/১৮ হাজার টাকার মত। বিক্রির জন্য তৈরি প্যাকেটজাত ভার্মি কম্পোস্ট আকবর হোসেন জানান, শুধু কম্পোস্ট নয় প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার কেচোঁও বিক্রি করেন তিনি।

কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, আকবরের প্রকল্পটি ছিল প্রথম প্রদর্শনী প্রকল্প। এ প্রকল্প দেখে এলাকায় তৈরি হয়েছে আরো প্রকল্প।

ফসলের মাঠে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা হয় এ সারের ব্যাপারে। নয়নপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক আবদুল মালেক জানান, শীত মৌসুমে তিনি ৩৬ শতক জমিতে সবজি চাষ করেছেন। আগে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলেও এবারই প্রথম তিনি ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো) সার ব্যবহার করছেন। তৈরির জন্য শেডে রাখা হচ্ছে গোবর তিনি জানান, এ সার ব্যবহারের ফলে আগের চাইতে প্রায় দুইগুণ বেশি ফলন আসছে। বেড়েছে মাটির উর্বরতাও।

কৃষি কর্মকর্তা মারুফ জানান, উদ্ভিদ ও প্রাণিজ বিভিন্ন ধরনের জৈববস্তুকে বিশেষ প্রজাতির কেঁচোর সাহায্যে কম সময়ে জমিতে প্রয়োগের উপযোগী উন্নতমানের জৈব সারে রূপান্তর করাকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়। গোবর,তরকারির ফেলে দেয়া অংশ, ফলমূলের খোসা,উদ্ভিদের লতাপাতা,পশু-পাখির নাড়ি-ভুড়ি,হাস-মুরগির বিষ্ঠা, ছোট করে কাটা কলা গাছের খোসা  এবং খড়কুটো খেয়ে কেঁচো জমির জন্য এ সার তৈরি করে।

এ সারে ফসলের জন্য উপকারী ১২/১৪টি উপাদান রয়েছে। এ সারটি সব ধরনের ফসলের ক্ষেতে ব্যবহারে উৎপাদন এবং গুণগত মান কয়েকগুণ বেড়ে যায়, মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়, চাষে পানি কম লাগে, রোগ ও পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম হয়,বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে, অধিক কুশি, ছড়া ও দানা গঠন হয়, মাটির বুনট উন্নত হয়, রাসায়নিক সারের চাইতে খরচ অনেক কম হয় এবং এ সার ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে।    কচুরি পানা, কলা গাছ ও পচনশীল উদ্ভিদ রাখা হয়েছে শেডে প্রস্তত প্রণালী:
কেঁচো সার তৈরি করতে প্রথমে উঁচু ছায়া যুক্ত জমি বাছাই করে নিতে হবে। এরপর মাটিতে চৌবাচ্চা তৈরি করে তার  উপরে ছাউনি দিতে হবে। প্রথমে চৌবাচ্চা বা পাত্রের তলদেশে ৩ ইঞ্চি ইটের টুকরো বা পাথরের কুচি দিতে হবে, তারপর পানি না জমার জন্য ১ ইঞ্চি বালুর আস্তরণ দিতে হবে,বালুর উপর সহজে পচবে এরকম জৈব বস্তু বিছিয়ে বিছানার মত তৈরি করতে হবে। এরপর আংশিক পচা জৈব দ্রব্য ও গোবর ছায়াতে ছড়িয়ে ঠাণ্ডা করে বিছানার উপরে বিছিয়ে দিতে হবে। মিশ্রণে পানি দিতে হবে ৫০/৬০ ভাগ, এরপর প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচো প্রতি কেজি মিশ্রণে ১০টি করে ছেড়ে দিয়ে ভেজা চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এভাবে দু’মাস রেখে দেয়ার পর সার তৈরি হয়ে যাবে সার।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।