সব শেষে ঢাকার আমিনবাজার এলাকায় অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া সিটি কর্পোরেশনের ৫২ একর জমি নিয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেন তিনি।
এরই মধ্যে সেখান থেকে ইট-বালুর আড়ত আর অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে ৩৭ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের অধীনে ৫ একর জমির ওপর অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট, ৩ একর জমিতে মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ, আরো ৩ একরে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্কশপ, একটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিং, ৬ একরের (ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও ট্রান্সপোর্ট) পার্কিং, একটি স্কুল ফর স্ট্রিট চিলড্রেন, ৬ একরের বাস-ট্রাক ডিপো, এসটিএস, হসপিটাল, একটি আধুনিক পার্কসহ আরো কিছু স্থাপনা গড়ার কথা ছিল।
আর এ প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য দিনক্ষণ অতিথি সবই ঠিক করা হয়ে গিয়েছিল। গত ৩০ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করতেন।
কিন্তু হঠাৎ করে প্রকল্পটি উদ্বোধনের ঠিক একদিন আগে অনুষ্ঠান বাতিল করার কথা জানান আনিসুল হক। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে ২৯ জুলাই লন্ডনে চলে যান তিনি।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে মেয়রের একান্ত সচিব একেএম মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন।
মিজানুর রহমান বলেন, স্যার ৫২ একরের প্রকল্পটি নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলেন। প্রায় ৩০ হাজার লোকের অ্যারেন্জমেন্ট ছিলো। সবাইকে দাওয়াত দেয়া শেষ, সাউন্ড সিস্টেম, স্টেজ ডেকোরেশন চলছে এমন সময় ২৮ জুলাই হঠাৎ করে স্যার বল্লেন, ‘প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করো। আমি অসুস্থ, লন্ডন যাবো। ফিরে এসে প্রকল্পের উদ্বোধন করবো। ’ তিনি ফিরে এলেন। কিন্তু.......
বলতে বলতে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মিজানুর রহমান। ভেজা চোখে আবারো কথা শুর করেন, ‘স্যার ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল মেয়র সামিট’ নামের একটি বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছিলেন। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩ শতাধিক মেয়রের অংশ নেয়ার কথা ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিন দিনব্যাপী সেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে সম্মতিও দিয়েছিলেন। তিন দিনে সেখানে বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার অনুষ্ঠিত হতো। আধুনিক সিটি গড়তে উন্নত বিশ্বের মেয়রদের মতামত নেয়াটাই ছিলো ওই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য। সেখানে সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থাকতেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। কিন্তু এখন সেই অনুষ্ঠান আর কিভাবে হবে? আমরা তাদেরকে দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছি।
এদিকে মাত্র আড়াই বছর নগরপিতার দায়িত্ব পালন করে তিনি সাধারণ মানুষ, দিন মজুর, রিকশাচালক থেকে শুরু করে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যেকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। আবার একইভাবে হয়েছেন অনেক দখলদারের চোখের বালি।
মেয়র সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার বলেন, প্রথম দিন থেকেই উনি একটা কথা বলতেন, কাউকে চেনার দরকার নেই, কাউকে জানার দরকার নেই, আইনে যা আসে তাই করবেন। ওনার সাথে কাজ করতে গিয়ে কোনো চাপ, কোনো সুপারিশ, বাধা কিছু্ই পাইনি। সব উনি একাই সামলাতেন।
ডিএনসিসি’র সচিব দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, এক কথায় বলতে গেলে ওনার মতো মেয়র পাওয়া অসম্ভব। আমার চাকরি জীবনে ওনার মতো মানুষ পাইনি। স্যারের সব থেকে বড় গুণ হলো উনি কোনো কাজ শেষ করেই থেমে যেতেন না। সেটার ফিডব্যাক নিতেন, ফলোআপ করতেন সব ঠিক ঠাক চলছে কিনা। অবাক করা বিষয় হলো ওনার চাকরি জীবনে যতোগুলো মিটিং হয়েছে সবগুলোর সামারি ওনার ডায়েরিতে লেখা আছে। মিরপুর নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে, কিন্তু ওনার প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হলে ১৮ সালের শেষে আপনারা মিরপুর এলাকাকে নতুন রূপে দেখতে পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৭
এসআইজে/জেএম