নরম গোঁফে তা দিতে দিতে বেশ গর্বের সঙ্গেই কথাগুলো বলছিলেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল মির্জা মো. বাবুল।
সোমবার (০৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্বরত ছিলেন বাবুল।
বাবুলের নিজের কথায়- আমাকে দেখে অনেকেই ছুটে আসেন। নিদেনপক্ষে একটা সেলফি তোলেন। এমনকি গাড়ি থামিয়েও অনেকে ছবি তোলেন আমার সঙ্গে। কেউ কেউ আবার খুশি হয়ে বখশিস-ও দেন। তবে সেটা ডিপার্টমেন্টের কেউ হলে নিই, নচেৎ নয়।
‘কথায় বলে গোঁফ দেখে বিড়াল চেনা যায়, আর অস্ত্র দেখে চেনা যায় কে কোনো দলের ক্যাডার’।
কিন্তু মির্জা বাবুলকে সবাই চেনে গোঁফে। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে সেটিই সযত্নে লালন করছেন বাবুল।
ট্রাফিক পুলিশে চাকরির বয়স দীর্ঘ ৩৪ বছর। দু’বছর বাদে বদলি হয় রাঙ্গামাটিতে। বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় রিজার্ভ পুলিশে কাজ করতেন। ক্লিন সেভড হিসেবে সেই তরুণে চেহারাটা এখনো জ্বলজ্বলে ছবি নিজের স্মৃতিতে। ঘটনার সময় ১৯৮৫ সাল। অফিস পরিদর্শনে এলেন অধিনায়কের স্ত্রী। বিপত্তিটা হলো সেদিন।
আমি তো ক্লিন সেভড। আমাকে দেখে ম্যাডাম (অধিনায়কের স্ত্রী) বলে ফেললেন, আরে গোঁফ ছাড়া পুরুষ মানুষ হয় নাকি!
আপনি গোঁফ রাখবেন। দেখতে ভালো লাগবে।
সেই থেকে শুরু। তারপর গোঁফের প্রতি যেন কেমন একটা মায়া পড়ে গেলো, ব্যস। তারপর থেকেই এই গোঁফ আমার সঙ্গী।
বলছিলেন মির্জা বাবুল। টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানার কাশিরবিয়ালা গ্রামের মৃত নুরুল হকের ছেলে মির্জা বাবুল। তাকে সবাই চেনেন ‘মোচওয়ালা পুলিশ’ হিসেবে।
গোঁফ রাখার বিশেষ কোনো উপকারিতা?
অবশ্যই অনেক উপকার আছে। এই গোঁফ আমার কাছে ট্রেড মার্ক। গোঁফের কারণে অনেক হিসাব-নিকেশ করে চলতে হয়। কোনো রকম দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। কারণ টাকা পয়সা নিলে সবাই বলবে মোচওয়ালা পুলিশই টাকা নিছে।
বলতে পারেন এই গোঁফই আমার দুর্নীতি অনিয়ম থেকে নিরব সুরক্ষা দিচ্ছে। তবে মানুষ আমার এই গোঁফকে বেশ ভালোবাসে। তারা ভালোই বলে। স্যাররা-ও উৎসাহ দেয়।
গোঁফ পরিচর্যায় বাড়তি ব্যয়?-- তেমন না। যখন যেখানে কাজ করি সেখানে বিশেষ একজন শীলের (নরসুন্দর) কাছে যাই। বলতে পারেন, মাসে শ’পাঁচেক টাকা খরচ হয়।
গোঁফ নিয়ে বিশেষ কোনো অনুভূতি?-- সেটা অনন্য। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডিউটি পড়লে ছেলে মেয়েরা অনেকেই আসে। তারা আমার সঙ্গে ছবি তোলে। বিশেষ করে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যখন ডিউটিতে ছিলাম। তখন সেখানে আসা বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিক আমাকে নিয়ে ছবি তুলেছেন। সে হিসাবে বহুদেশে আমার ছবি পৌঁছে গেছে।
তবে গোঁফ দেখে বরগুনা পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাহেব ১ হাজার টাকা বখশিস দিয়েছেন। আবার যখন হাইওয়ে পুলিশে চাকরি করেছি কেবলমাত্র গোঁফের জন্যে এসপি স্যার আমাকে মাসে ৫’শ টাকা করে দিতেন।
সাভারে পাননি?-- না। পাইনি। তবে এ নিয়ে কোনো আফসোস-ও নেই। কারণ আমার এই সৌখিনতার কারণে আজ অনেকেই আমাকে চেনে। আমার সঙ্গে ছবি তোলেন। শত ব্যস্ততার মধ্যে এটাই আমার ভালোলাগে- বলতে বলতেই হাতে লাঠি নিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মির্জা বাবুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৭
জেডআর/এসএইচ