ভোরের সূর্য লাল হওয়ার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পরিপাটি করে রাখেন স্মৃতিসৌধের মেঝে। এটা তার পেশা নয়, যেন নেশা।
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাভারের নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সৈয়দ মইনুল ইসলামের নকশায় কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৮৮ সালে। তার নকশায় ঠাঁয় পায় গণকবর, সাতটি স্তম্ভ, সবুজ বাগান, জাদুঘর, মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি সম্বলিত ম্যুরালসহ ১৮টি স্থাপনা। এসব স্থাপনা দেখভালের জন্য ২৫০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫৭ জন স্থায়ী ও বাকি সবাই অস্থায়ী হিসেবে স্মৃতিসৌধে কাজ করেন। এদের মধ্যে দু’জন প্রকৌশলী, আটজন সিকিউরিটি গার্ড, ৩৫ জন মালি, চারজন পিয়ন, একজন সুইপার, চারজন ঝাড়ুদার, মসজিদের জন্য ইমামসহ তিনজনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তবে এর বাইরেও ঝাড়ু হাতে কাজ করেন ছয়/সাতজন। পারিশ্রমিকে না, তারা আসেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সেবা করতে। তাদের কবর ও স্মৃতিকে যত্ন করে রাখাই তাদের কাজ।
স্মৃতিসৌধের ঝাড়ুদার রঙ বানু বাংলানিউজকে বলেন, বিয়ের ১০ দিনের মাথায় স্বামীর হাত ধরে স্মৃতিসৌধে আসেন তিনি। দু’বছরের মাথায় স্বামী মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার ৪৫ দিন পর হারান মেয়ে সুমাইয়াকেও। সবকিছু বিবেচনা করে সে সময়ের প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন ঝাড়ুদার হিসেবে তাকে চাকরি দেন। এরপর থেকে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধের মেঝে পরিষ্কার রাখেন। তিনি আরও বলেন, এখানে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ও স্মৃতিস্তম্ভ। যাদের কারণে এদেশের নাগরিক হতে পেরেছি। স্বাধীন হতে পেরেছি। তাদের স্মৃতি স্মারক পরিষ্কার রাখার মহান দায়িত্ব পেয়ে আমি গর্বিত।
কায়েস আলী নামে এক মালি জানান, দু’বছর আগে অবসর নিয়েছেন তিনি। কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের কাজ এলেই তিনি ঘরে থাকতে পারেন না। সবার সঙ্গে স্বাধীনতার স্মারক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে ছুটে আসেন। শহীদদের কবর ও স্মৃতিসৌধের মেঝে পরিষ্কার করাটা তার জন্য বড় প্রাপ্তি। যতোদিন শরীরে শক্তি থাকবে ততোদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিষ্কারের কাজ করবেন।
গণপূর্ত বিভাগের সহ প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজের ইজারা দেওয়া হয়। তাদের পাশাপাশি স্মৃতিসৌধের নিজস্ব লোকজন কাজ করে থাকেন। এছাড়া স্মৃতিসৌধের নিজস্ব লোকজন সারা বছর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। তবে এখানে রয়েছে কিছু দেশপ্রেমী কর্মচারী। তাদের দেখলে সত্যিই দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। অনেকেই আছেন যারা অবসরে চলে গেছেন তুবুও তাদের দেশের প্রতি ভালোবোসা প্রশংসার দাবি রাখে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
আরবি/