হত্যাকাণ্ডের সময় নিহতের স্বামী হিউবার্ড অনিল গোমেজ (৭০) ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তাকে ও গৃহকর্মীকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অনিল গোমেজের ভাষ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে চার/পাঁচজন মুখোশধারী যুবক দরজায় নক করে। দরজা খুলতেই তারা বাসার ভিতরে প্রবেশ করে মিলু গোমেজকে হত্যা করে। বাধা দিতে গেলে মুখোশধারীরা অনিল গোমেজকেও আঘাত করে পালিয়ে যায়।
তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, কে বা কারা, কী উদ্দেশে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে জানতে চেষ্টা চলছে। নিহতের স্বামী অনিল গোমেজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত অনিলের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন মহাখালী আরজতপাড়া এলাকার ৩৮ নম্বর নিজ বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে মিলু মীলগেট গোমেজের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মিলু মীলগেট গোমেজ ও তার স্বামী হিউবার্ড অনিল গোমেজ এ বাড়িতে বসবাস করতেন। তাদের চার ছেলের মধ্যে স্টালিন গোমেজ, রবার্ড ক্লাইভ গোমেজ ও লিংকন গোমেজ স্ত্রীসহ কানাডাতে বসবাস করেন। ছোট ছেলে মোজেস গোমেজ থাকেন আমেরিকায়।
তেজগাঁওয়ে ৮ কাঠার একটি জমি ছাড়াও ফার্মগেটের ইউসিসি টাওয়ারে এই দম্পতি দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তাদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জেও বেশ জমিজমা রয়েছে। তবে জমি-জমা নিয়ে কারও সঙ্গে তাদের বিবাদ নেই বলে জানা গেছে। ঘটনার পর তাদের পাসপোর্ট ও ভ্রমণ সংক্রান্ত জরুরি জিনিসপত্র খোয়া গেছে বলেও অভিযোগ নিহতের পরিবারের।
সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে মিলু মীলগেট গোমেজকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ফ্ল্যাটের ড্রইং রুমের মেঝেতে মরদেহটি পড়েছিলো। পরে স্থানীয় সুনমা ডি কস্তার সহযোগিতায় মরদেহ উল্টে-পাল্টে দেখা যায়, মুখ ও মাথা স্বাভাবিক, চোখ বন্ধ ও স্বাভাবিক, নাক ও কান স্বাভাবিক। নিহতের গলার বাম পাশে কানের নিচে ধারালো চাকুর আঘাত দেখা গেছে। জখমের দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৫ ইঞ্চি। ডান হাতের কব্জির উপরিভাগে আঘাতের চিহ্ন এবং বাম হাতে রক্তের দাগ রয়েছে।
পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলের মেঝেতে মরদেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং নিহতের স্বামী অনিল গোমেজ লাশের পাশে থাকা সোফায় বসে ছিলেন। রক্তমাখা একটি চাকুও তার সামনের টি-টেবিলে রাখা ছিলো। হত্যাকাণ্ডের আগে বাইরে থেকে কেউ ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছে এমন কোনো প্রমাণ এখনও পায়নি।
নিহতের ভাগ্নি সিনথিয়া গোমেজ বাংলানিউজকে বলেন, আমার মামা-মামি ঘুরতে খুব পছন্দ করতেন। চার মাস আগে কানাডা থেকে তারা দেশে আসেন। তারাও কানাডার নাগরিক। আজ সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে গাজীপুরে তার ছোট বোনের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন মামী। সেখানে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিলো তাদের।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, বাইরে থেকে এসে কেউ তাকে হত্যা করেছে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নিহতের স্বামীও হত্যার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি খুব অসুস্থ, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করেনন। ওষুধের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে তিনিই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭
এসজেএ/এমজেএফ