১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয়মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে একটি মানচিত্র, একটি নতুন সূর্য ছিনিয়ে আনার দিন মহান বিজয় দিবস।
বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে দেশমাতৃকার তরে প্রাণ বিলিয়ে দেওয়া শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর থেকে শহীদ মিনারমুখী সিলেটবাসী।
নগরীর চৌহাট্টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন শুরুর মধ্য দিয়ে দিনভর চলছে বিজয় দিবস উদ্যাপনের কর্মসূচি। ভোর থেকেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। নগরীর সবক’টি সড়কে মানুষের গন্তব্য ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
ভোর ৬টা ৩১ মিনিটে শহীদবেদিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে প্রথমে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটি, এরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
পর্যায়ক্রমে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, জেলা ও মহানগর বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সড়ক বিভাগ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, সিলেট প্রেসক্লাব, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা), ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিশিষ্টজনেরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এছাড়া সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ৪৭তম বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনারের বেদি।
মহান বিজয় দিবসে এবার নগরীতে বাইসাইকেল রাইড করেছে বিভিন্ন ক্লাব। নগরীর ক্বীনব্রিজ মোড় থেকে শুরু হওয়া বাইসাইকেল রাইডের নেতৃত্ব দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিভিন্ন ক্লাবের ৫ শতাধিক তরুণ-তরুণী রাইডে অংশ নেন।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ৯টা থেকে জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় কুচকাওয়াজ। এর উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার নাজমানারা খানুম। এতে মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, র্যাব, বিএনসিসি, আনসার, ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, কারারক্ষী এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন।
বেলা ১১টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, বাদ যোহর জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনায় বিভিন্ন মসজিদে মোনাজাত ও মন্দিরসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা এবং বেলা ১২টায় সিলেট অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলাদের ক্রীড়ানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা স্টেডিয়ামে সিলেট জেলা প্রশাসন বনাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঝে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ছাড়াও শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও প্রীতি টেনিস প্রতিযোগিতার আয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭
এনইউ/এএসআর