প্রকল্প হাতে নেয়ার সময় মনে করা হয়েছিল পদ্মার বুকে জেগে ওঠা ১ হাজার ১৬২ একর জমি খাস জমি। এই জমিতেই হয়তো ড্রেজিং করা মাটি ফেলা হবে।
সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আলীম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রকল্পের আওতায় চরের কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কারণ এগুলো আর চর নাই। মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন। এছাড়াও চরের বাসিন্দারা খাজনাও পরিশোধ করছেন। সুতরাং ড্রেজিং করা মাটি ফেলতে হলে জমি নতুন করে অধিগ্রহণ করতে হবে। আমরা ভেবেছিলাম এগুলো হয়তো খাস জমি। ’
সর্বশেষ পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিলো ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মূল ডিপিপি’র(উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) থেকে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ অতিরিক্ত ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়ছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মানে, মোট ব্যয় থেকে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ বাড়ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ কয়েক দফা বৈঠকও করেছে। তবে বৈঠকে অতিরিক্ত ব্যয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এখন ব্যয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেবে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সেতু বিভাগের প্রস্তাবে অতিরিক্ত ব্যয় সঠিক কিনা এই বিষয়ে তদন্ত করতে পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবে আইএমইডি। এর পরেই ব্যয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
আইএমইডি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, চরের ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দাবি করেছে সেতুবিভাগ। তবে এই দাবি যৌক্তিক কিনা তা খতিয়ে দেখতে আমরা সরেজমিন সেতু প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবো। এর পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সেতুবিভাগ সূত্র জানায়, চারটি মৌজায় কাঁঠালবাড়ি (মাদারীপুর), বটেশ্বর (মুন্সীগঞ্জ), রণজিত খাঁ (মাদারিপুর) ও মাদবরেরচর (মাদারিপুর) মৌজায় চরের ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। তবে জমি নিয়ে এক ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়েছে। স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্টের ৮৬ ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের এডি লাইন (প্রশাসনিক লাইন) টেনে জমির খাজনা বন্ধ রাখা হয়। যদিও এই অতিরিক্ত জমি ৩০ বছরের মধ্যে খতিয়ানভূক্ত হয়। ৩০ বছরের মধ্যেই এসব জমি ভোগদখলকারীর নামে খতিয়ানভূক্ত হয়। রেকর্ডও হয়। ফলে এসব জমি আর চর হিসেবে থেকে নেই, বরং ব্যক্তি মালিকানার জমি হয়ে গেছে। চরের জমির মালিকানা নির্ধারণের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের এখতিয়ারভুক্ত। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জমির মালিকানা নির্ধারণ করা হয়। ফলে অতিরিক্ত জমি টাকা দিয়ে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে পদ্মাসেতু প্রকল্পের আওতায়।
সেতুবিভাগ আরও জানায়, মূল ডিপিপি’তে ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় প্রাক্কলিত ছিলো ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু এখন মোট ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে ২ হাজার ৬৯৮ হেক্টর। অতিরিক্ত জমি বাবদ মোট ব্যয় প্রয়োজন ২ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। কারণ চরে অতিরিক্ত ১ হাজার ১৬২ দশমিক ৬৭ হেক্টর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। পদ্মাসেতু প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ আরও আরও এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। আর তাই পদ্মাসেতু প্রকল্পের সামগ্রিক ব্যয়ও যাবে বেড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এমআইএস/জেএম