বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে বিজয় দিবস উদযাপন করতে ঢাকায় আসেন একাত্তরের মিত্রবাহিনীর ২৭ জন ভারতীয় যুদ্ধবীর। ওই প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ ছিল না, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যুদ্ধ ছিল। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের কমন শত্রু ছিল পাকিস্তান। আমরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সরকারের অনুরোধে মিত্র বাহিনী হিসেবে সহযোগিতা করি।
শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল মন্তব্য করে জয় ভগবান সিং যাদব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সেফটি সিকিউরিটিতে রোল মডেল। সারা বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাস। সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ নেই। তাদের সনাক্ত করা কঠিন। আগে ইউরোপ আমেরিকা বিশ্বাসই করতো না তারও একদিন সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রমণ হবে। আজ তারাও বলতে বাধ্য হচ্ছে সন্ত্রাস সবার জন্য হুমকি।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় তার বক্তৃতায় বলেছেন সন্ত্রাস শুধু ভারতের সমস্যা নয় এটা সকল দেশের সমস্যা। এশিয়ার দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করতে পারে।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের তুলনা করে তিনি বলেন, আমি যখন ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসি তখন এই দেশে কিছুই ছিল না। উত্তরবঙ্গে যাওয়ার একটি মাত্র সড়ক ছিল রংপুর থেকে বগুড়া যাওয়ার। পাকিস্তানি আর্মিরা তখন সমস্ত অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল। বহু জমি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, যেন পরবর্তিতে আর ফসল না হয়। আজ সেই বাংলাদেশেই দেখি সুন্দর সুন্দর রাস্তা, ব্রিজ, ভবন, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা সত্যি অভিভূত।
ভারতীয় এই যুদ্ধবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ আজ একটি সাকসেস স্টোরি। বাংলাদেশে শক্তিশালী অর্থনীতি। এই দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ যা ভারতের চাইতে বেশি। একসময় বাংলাদেশ ছিল আমদানি নির্ভর। এখন বিশ্বের বহু দেশে বাংলাদেশি পণ্য পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, আমি বহু দেশ ভ্রমণ করেছি, তখন দেখেছি সেই সব দেশে বাংলাদেশি পণ্য। এদেশের দক্ষ মানবশক্তি সারা বিশ্বেই প্রশংসিত। যখন অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড যাই তখন দেখি সেসব দেশে বাংলাদেশি পণ্য। এসব দেখে সত্যিই অভিভূত হই। অনেক দেশেই বাংলাদেশি চিকিৎসক, প্রকৌশলী কাজ করছেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আধুনিক উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করেছেন। তিনি আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, আমাদের অনেক সময় দিয়েছেন। তার বিচক্ষণতা ও রাষ্ট্রপরিচালনা দেখে আমরা সত্যিই অভিভূত।
এসময়, ভারত অতীতে যেমন বাংলাদেশের সহযোগিতা করেছিল, আগামীতেও যেকোন প্রয়োজনে বাংলাদেশের সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এসএম/এনটি