এছাড়া একই মামলার আরেক আসামিকে যাবজ্জীবন (আমৃত্যু) সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাকে জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরিন কবিতা আকতার এ রায় ঘোষণা করেন।
এ সময় মামলার সাত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণা পর দণ্ডিতদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন- রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বেড়াবাড়ী গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মাজেদুর রহমান সাগর (২২), একই গ্রামের হজরত আলীর ছেলে নাজমুল হক (২৩) ও আবদুর রাজ্জাকের ছেলে রিপন সরকার লিটন।
আর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত (আমৃত্যু) আসামিরা হলেন- সাজেদুর রহমান সাগরের মা এবং আবুল কাশেমের স্ত্রী আছিনুর বেগম (৪৮)। এছাড়া বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- উপজেলার বেড়াবাড়ী গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে শাহাবুদ্দিন, আলাউদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলাম ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাগরের বাবা আবুল কাশেম।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, অপহরণের ছয় দিন পর গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সকালে স্কুলছাত্র ফজলে হোসেন রাব্বীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বেড়াবাড়ী সাধুপাড়া এলাকার গভীর নলকূপের নর্দমা থেকে মাথা ও হাত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ক্ষত-বিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
পরে এ ঘটনায় জড়িত সাতজনকে আটক করে পুলিশ। বাবার সঙ্গে বিরোধের জের ধরে শিশু রাব্বিকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করেন স্বজনরা।
নিহত স্কুলছাত্র ফজলে হোসেন রাব্বী উপজেলার বেড়াবাড়ী গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে। সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। ২০ ডিসেম্বর তাকে অপহরণ করেছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর তার বাবা আলী হোসেন থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, শাহাবুদ্দিন নামের এক অপহরণকারী মোবাইল ফোনে আলী হোসেনের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছেন।
অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে ১০ বছরের এক শিশুকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। অপহরণের ছয়দিন পর তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর রাব্বীকে অপহরণ করা হয়। ২২ ডিসেম্বর দুপুরে মোবাইল ফোনে রাব্বীকে অপহরণের কথা জানিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনা রাব্বীর বাবা পুলিশকে জানালে ওই ফোনের সূত্র ধরে ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে বেড়াবাড়ী গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে শাহাবুদ্দিন ও আলাউদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ২৫ ডিসেম্বর ভোরে বেড়াবাড়ী গ্রামের নাজমুল হক, আবুল কাশেম, আছিনুর বেগম, মাজেদুর রহমান সাগর, রিপন সরকার লিটন, আলাউদ্দিন ও পবা উপজেলার বাগধানি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনকে অভিযান চালিয়ে আটক করে মোহনপুর থানা পুলিশ।
পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাগর রাব্বীকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
তিনি বলেন, ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পাশের বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাব্বীকে কৌশলে ডেকে নেয় একই এলাকার সাগর। এ সময় সাগরের সঙ্গে রিপন ও নাজমুলও ছিল। পরে তারা রাব্বীকে ডাইংপাড়া মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে পেছন থেকে প্রথমে রাব্বীর মাথায় চাপাতির কোপ দেয়া হয়। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সাগর তার দুই পা চেপে ধরে আর রিপন ও নাজমুল গলাকেটে করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
পরে তারা তাকে সেচের কাজে ব্যবহৃত নালায় পুঁতে রেখে চলে যায়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি পাশেই বারনই নদীতে ফেলে দেয় তারা। সাগরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাব্বীর মরদেহ উদ্ধার হয়। এ সময় মরদেহের মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। একটি হাত পাওয়া যায়নি। পরে তা ময়নাতদন্তের জন্য তা রামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
রাষ্ট্রপক্ষে চাঞ্চল্যকর এ মামলা পরিচালনা করেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট একরামুল হক ও অ্যাডভোকে মোশারফ হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
এসএস/এমএ/এসএইচ