সাহসী দুই শিশু রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে সিহাবুর গ্রামের সুমন আলীর ছেলে ও লিটন শহীদুল ইসলামের ছেলে।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুই শিশুকে পুরস্কৃত করেছেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন রেজা । বেলা ১২টার দিকে রেললাইনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সিহাবুর ও লিটনের হাতে স্কুলব্যাগ, টিফিন বক্স ও শীত নিবারণের কম্বল পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন তিনি।
সোমবারের (১৮ ডিসেম্বর) ঘটনাটির পর তাৎক্ষণিকভাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি তার সংসদীয় এলাকার ওই দুই শিশুর লেখাপড়ার সকল দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। দু’জনকে প্রতি মাসে নগদ এক হাজার টাকা করে নিজের অর্থায়নে বৃত্তি দেওয়ার কথা বাংলানিউজকে জানান তিনি। দুই শিশুর এসএসসি পাসের পর পুনরায় আলাদাভাবে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন।
কোটি টাকার জ্বালানি নিয়ে রাজশাহীগামী ট্রেনটি দুই শিশুর বুদ্ধিমত্তায় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও দুই শিশুকে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাঘার আড়ানি রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, নিজ তহবিল থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ছোট্ট দুই শিশুর বুদ্ধিদীপ্ত তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে জ্বালানি তেলবাহী ৩২ বগির ট্রেনের বিশাল বহরটি রক্ষা পেয়েছে। না হলে হয়তো অনেক বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো। এর পর ওই লাইন দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনও আসতো! তাই তাদের দু’জনকে পুরস্কৃত করা হবে।
আড়ানি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের উপস্থিত বুদ্ধিতে এলাকার মানুষ খুবই খুশি এবং আনন্দে উদ্বেলিত। মঙ্গলবার সকাল থেকে অনেকেই গিয়ে ওই দুই শিশুকে আদর এবং স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
এমন ভালো কাজে খুশি সাহসী শিশু সিহাব ও লিটনের মায়েরাও।
সিহাবের মা রিতা বেগম বলেন, তার স্বামী সুমন আলী দিনমজুরের কাজ করেন। সংসারে অভাব থাকলেও ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। এর গুণেই সিহাব এমন ভালো কাজ করতে পেরেছেন। ছেলের এমন কাজে গর্বে তাদের বুক ভরে গেছে।
লিটনের মা মিনু বেগম বলেন, তার স্বামী সাইদুলও দিনমজুর। সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর কারণে সাহস করে এমন কাজ করতে পেরেছে। এজন্য তার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও খুশি। তারা এজন্য লিটনের লেখাপড়া চালিয়ে যেতেও বলেছেন।
দূরন্ত দুই শিশু সিহাব আর লিটন। তারা জানায়, সারাদিনই রেললাইনের পাশে খেলাধুলা করে তারা। ট্রেনের আসা-যাওয়া তাদের কাছে তাই খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সোমবারের সকালটা তাদের কাছে ছিল অন্যরকম। তাদের প্রতিদিনের দেখা লাইন আজ যেনো একটু ভিন্ন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে লাইনের ফাটল দেখে ছুটে যায় বাড়িতে। লাল রঙয়ের মাফলার এনে দু’জন দুই প্রান্ত ধরে দাঁড়িয়ে পড়ে লাইনের ওপরে। এতেই দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় তেলবাহী ট্রেনটি।
আড়ানি রেলস্টেশনের ৪০০ মিটার দূরের ঝিনা রেলগেটের ওই ঘটনায় অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় কোটি টাকার জ্বালানি তেল। তেলবাহী ট্রেনটি খুলনা থেকে রাজশাহী রেলস্টেশনে যাচ্ছিল। ঘটনার পর পাবনার ঈশ্বরদী থেকে মিস্ত্রি নিয়ে গিয়ে রেললাইন মেরামত করে রেল কর্তৃপক্ষ। দুই ঘণ্টা পর বাঘা-রাজশাহী রুটের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
এসএস/এএসআর