ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ছিনতাইকালে শিশুর মৃত্যু

‘ওর হাসিটুকু ছিল সবচেয়ে দামি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
‘ওর হাসিটুকু ছিল সবচেয়ে দামি’ ছিনতাইকালে নিহত হওয়া শিশু। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘সকাল বেলা ছেলেরে কোলে না নিলেই চিৎকার দিয়ে কান্না করতো। কোলে নিতেই তার ছোট হাত দিয়ে আমাকে খামচে ধরতো, খুব সুন্দর কইরা হাসতো। ওর হাসিটুকু ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে দামি। এমন করে আর কেউ হাসবে না, আর কেউ আমাকে খামচে ধরবেও না।’

গভীর ভারাক্রান্ত মনে কথাগুলো বলছিলেন নিহত পাঁচ মাসের শিশু আরাফাতের বাবা শাহ আলম।

গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকায় ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন শাহ আলমের স্ত্রী আকলিমা ও তার পাঁচ মাস বয়সী শিশু সন্তান আরাফাত।

ছিনতাইকারীরা আকলিমার ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান দিলে চলন্ত রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয় পাঁচ মাসের শিশু আরাফাত। তৎক্ষণাৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছিনতাইকালে শিশুর মৃত্যু: যাত্রাবাড়ীর এএসআই প্রত্যাহার

এ ঘটনায় সোমবার দুপুরেই অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন শিশু আরাফাতের বাবা শাহ আলম। মামলা নম্বর ৬৭।

শিশু আরাফাতের বাবা বাংলানিউজকে বলেন, এক সন্তানের চিকিৎসা করাতে এসে আরেক সন্তানের প্রাণ গেল। কি দোষ ছিল এই নিষ্পাপ শিশুটির।

‘যে আমার সন্তানের প্রাণ কেড়ে নিল, আমি তার অনেক কঠিন বিচার চাই। তার এমন বিচার করা হোক যাতে আর কেউ ছিনতাই করতে গেলে আঁতকে ওঠে’ –যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, সন্তানের মৃত্যুতে আমার স্ত্রী নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো কথা বলে না। খালি কান্না করছে। সে এখন অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে।

ওই ছিনতাইকারীর সম্পর্কে তিনি বলেন, সদরঘাট থেকে রিকশা করে শনির আখড়া যাওয়ার পথে দয়াগঞ্জ রেললাইনের ১০০ গজ পূর্ব দিক থেকে এক যুবক দৌড়ে আসে। তখন আকলিমার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে পেছন থেকে টান দেয়। হেচঁকা টানে আকলিমা ও তার কোলে থাকা পাঁচ মাসের শিশু আরাফাত রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে যায়। ওই যুবকের গায়ের রং কালো। সে কালো প্যান্ট ও মাটি রঙের টি-শার্ট পরা ছিল। তার উচ্চতা পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ফুট হবে।

এ ঘটনায় ওই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারে পুলিশের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে বলে জানান যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নিহত পাঁচ মাসের শিশু আরাফাতের বাবা শাহ আলম শরিয়তপুর জেলার সখিপুর উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামে বসবাস করেন। তিনি নিজ গ্রামেই কৃষিকাজ ও দিনমজুরের কাজ করেন। পরিবারের দুই মেয়ে ও দুই সন্তান এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা থাকতেন। তার প্রথম স্ত্রী সেলিনার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর দুই মেয়ে সানজিদা (৯) ও সাথি (৭) তার কাছে থাকে। শাহ আলমের দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমার ঘরে দুই ছেলে সন্তান আল আমিন (৪) ও আরাফাত (৫ মাস)।
 
গত ৬-৭ মাস ধরে বড় ছেলে আল আমিন বাতজ্বরে ভুগছিল। ঢাকার শিশু হাসপাতালে বহুদিন ধরে তার চিকিৎসা করানো হচ্ছিল। আবারও চিকিৎসার জন্য রোববার রাতে শরিয়তপুর থেকে লঞ্চে যোগে সোমবার ভোরে ঢাকায় আসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
এসজেএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।