বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী ম্যানেজারের দপ্তরের সামনে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে তেলবাহী ট্রেনকে রক্ষা করা সেই দুই শিশুর পরিচয় এখন ‘মাফলার বীর’।
১৮ই ডিসেম্বর ছোট্ট দুই শিশুর বুদ্ধিদীপ্ত তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে জ্বালানি তেলবাহী ৩২ বগির ট্রেনের বিশাল বহরটি রক্ষা পেয়েছে। নাহলে হয়তো অনেক বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। এর পর ওই লাইন দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনও আসতো। তাই তাদের দু’জনকে পুরস্কৃত করা হলো। রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় লাইন ভাঙা দেখতে পেয়ে দৌড়ে বাড়ি থেকে লাল রঙের মাফলার এনে দু’জন দু’দিকে ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে ট্রেনের চালক ট্রেনটি থামিয়ে দেয়। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে তেলবাহী ট্রেনটি রক্ষা পায়।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী মহানন্দা একপ্রেস ট্রেনে চেপে বাবা-মার সঙ্গে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে আসে এই দুই শিশু। সেখান থেকে তাদের পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় দপ্তরের সামনে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানায় রেল কর্মকর্তারা। পরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রেলওয়ের বিভাগীয় ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার শিশুদের দু’জনের হাতে ১৩ হাজার টাকা ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন-রেলওয়ের বিভাগীয় ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার, আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা শওকত জামিল মোহসী, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আসাদুল হক, বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী আরিফুর রহমান, বৈদ্যুতিক কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম, বিভাগীয় সংকেত প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা আলম, পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হব্বুল, রেলওয়ে ঠিকাদার ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, রেল শ্রমিক লীগের সভাপতি ইকবাল হায়দার, প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হব্বুল রেলওয়ে ঠিকাদার আনোয়ারুল ইসলাম শিশুদের ১ হাজার টাকা করে নগদ পুরস্কার দেন। এছাড়া মীর আকতার হোসেন লিমিটেডের পক্ষ থেকে দুই শিশুকে নগদ ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
সাহসী দুই শিশু রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে সিহাবুর গ্রামের সুমন আলীর ছেলে ও টিটোন শহীদুল ইসলামের ছেলে। সিহাব প্রথম ও টিটোন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। রেলের জমিতে পরিবারের সঙ্গে তাদের বসবাস।
এদিকে, মঙ্গলবার ওই দুই শিশুকে পুরস্কৃত করেছেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন রেজা। দুপুর ১২টার দিকে তিনি রেললাইনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সিহাবুর ও টিটোনের হাতে স্কুলব্যাগ, টিফিন বক্স ও কম্বল তুলে দেন।
সাহসী শিহাবের মা রিতা বেগম জানান, তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। তারা এ শিশুদের মানুষ করতে চান। এজন্য সরকারি সহযোগিতা চান।
টিটোনের নানী শুক্কুরজান বেওয়া বলেন, রেললাইনের ধারে রেলওয়ের জায়গাতে আমরা বসবাস করি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লেখাপড়ার না হয় খরচ দিবে, থাকার ব্যবস্থা করবে কিড্যা!
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭
আরএ