ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আগুন তাপিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় ওরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
আগুন তাপিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় ওরা রাস্তার পাশে আগুন পোহাচ্ছে মেহনতি মানুষ। ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফ

বগুড়া: মাঘের শীতে নাকি বাঘ কাঁপে। সেই মাঘ আসতে ঢের বাকি। কিন্তু তার আগেই উত্তরের মানুষের শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে পৌষ। নিন্ম ও মধ্যবিত্তরা তাই বেশ বিপাকেই পড়েছেন। অন্তত আগুন তাপিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা তেমনটাই জানান দিচ্ছে।

সুমন ও হাসান দু’ভাই। হাসান বয়সে একটু বড়।

বাড়ি গাইবান্ধা জেলা শহরে। সেখানে নিজেদের কোনো জায়গা-জমি নেই। সংসারেও প্রচণ্ড অভাব। বাবার বেশিরভাগ সময় অসুখ লেগেই থাকে। মা অন্যের বাসা-বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। তবু সংসার চলতে চায় না। অভাবের ঘানি সহ্য করতে না পেরে বাবা-মার সঙ্গে বগুড়া শহরে চলে আসে ওরা।

কুয়াশা মোড়ানো ভোর থেকে শুরু হয় তাদের জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নাগাদ শহরের বিভিন্ন ময়লার স্তুপ ও ভাঙাড়ি পাড়ায় ছোটাছুটি করে বেড়ায়। নানা ধরনের ভাঙাড়ি লোহা লক্কর, পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করে। পরে সেগুলো মহাজনদের কাছে বিক্রি করে মায়ের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বের হয় দু’ভাই।

সমবয়সী সহপাঠীদের সঙ্গে আগুন জ্বালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সড়কের পাশে ময়লার স্তুপ ঘেঁষে আগুন জ্বালিয়ে তার তাপে শীত নিবারণের চেষ্টা করে ওরা।

রাস্তার পাশে আগুন পোহাচ্ছে মেহনতি মানুষ।  ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফ বগুড়া শহরের বাদুরতলা, হাট্টিপট্টি, রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের এমন দৃশ্য দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহর থেকে আসা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ এসব এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। আবার অনেকেই এসব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ঝুপড়ি ঘর উঠিয়ে বসবাস করেন। তাদের কেউ বাসা বাড়ি ও হোটেলে ঝিয়ের কাজ করেন। অনেকেই ফেলে দেওয়া বিভিন্ন সামগ্রী কুড়িয়ে বেড়ান। দিন শেষে মহাজনের ঘরে তা বিক্রি করেন।

কিন্তু শীত বাড়তে থাকায় এ শ্রেণির মানুষ অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। ফলে সন্ধ্যার মধ্যে কাজকর্ম গুটিয়ে রাত নামামাত্র যে যার মত আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আগুন জ্বালিয়ে চারপাশ দিয়ে সবাই গোল হয়ে বসে পড়েন। তাপ পেতে আগুনের ওপর হাত দিয়ে থাকেন।  

আর গায়ে শীত নিবারণের হালকা পোশাক থাকলেও মাঝে মধ্যে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া যেন কোন কাজই দেয় না। সেই হিমেল হাওয়া যেন হাড়ে গিয়ে আঘাত করে। তাই আগুন জ্বালিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও শীত নিবারণের চেষ্টা করেন এসব মানুষ।

রাস্তার পাশে আগুন পোহাচ্ছে মেহনতি মানুষ।  ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফ আব্দুল জব্বার। মধ্য বয়সী মানুষ তিনি। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রত্যহ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই শহরে রিকশা চালান। এ আয়ে কোন রকম চলে তার অভাবের সংসার। তাই এখনো নতুন করে শীতবস্ত্র কেনা হয়নি। গত বছরের যা আছে তাই গায়ে জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন–এমনটাই বাংলানিউজকে জানান আব্দুল জব্বার।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘সারাদিন রিকশা চালাতে গিয়ে শীত যেন হাঁড় পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে যায়। তাই কাঁপুনি থামাতে সবার সঙ্গে আগুন তাপাই’।   

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।