দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শত শত ট্রাকের চাপে প্রতি রাতে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত থাকে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। রাত ১টা থেকে শুরু হওয়া এই বিশাল কর্মযজ্ঞের অপেক্ষায় থাকে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী।
যারা প্রতি রাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ট্রাক থেকে ছিনতাই করে সবজি, ডিম, মাছ ও মাংস। এই চক্রটি ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত চালায় তাদের কার্যক্রম।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে রাজধানীর ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাত ১টা নাগাদ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো কারওয়ান বাজার এলাকায় আসতে শুরু করে। আর এতে ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়।
যানজট সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিনতাইকারীদের কয়েকটি দল নেমে পড়ে রাস্তায়। প্রত্যেকের হাতে থাকা ছুরি দিয়ে ট্রাকের বিভিন্ন পণ্যের বস্তা ছিদ্র করে নিয়ে যায় সবজি, ডিম কিংবা হাঁসমুরগি। এই ক্ষেত্রে ট্রাকে বসে থাকা ব্যবসায়ী কিংবা রাস্তায় থাকা লোকজন তাদের বাঁধা দিতে আসলে উল্টো তাদের ওপর হামলা করে।
ছিনতাইকারী দলগুলো সিডিকেন্টের মতো কাজ করে। এদের কয়েকজন লিডার থাকে যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পছন্দমত পণ্যের ট্রাক আসলে সিগন্যাল দেয়। পরে অন্যরা এসে ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে বস্তা কিংবা খাঁচা থেকে মাছ, হাঁসমুরগি ও নানা সবজি নিয়ে যায়।
প্রতি রাতে একজন ছিনতাইকারী এভাবে ৮-১০ কেজি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছিনতাই করে। আর এসব পণ্য বিক্রি করার জন্য কারওয়ান বাজার ও এর আশেপাশের এলাকার বাজারগুলোতে তাদের ব্যবসায়ীও ঠিক করা আছে। ছিনতাই করা পণ্য তারা ৪০০-৫০০ টাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে।
ছিনতাইকারীরা ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার এলাকায় রাস্তায় শুয়ে থাকে ছিন্নমূল মানুষের মতো। ট্রাক আসলে তারা ছিনতাইকারী নয়তো তারা রাস্তার ছিন্নমূল মানুষ।
ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের বয়স ১৫-২৫ বছরের মধ্যে। এদের অধিকাংশই মাদকসক্ত। এভাবে ছিনতাই করে জিনিসপত্র সকালে বাজারে বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে সারাদিন তারা মাদক সেবন করে।
এই দলের একজন মো. বাবু বাংলানিউজকে জানান, ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রায় ২৫০ জনের মতো সদস্য রয়েছে। তারা রাত ১২টার পর থেকে এই এলাকায় অবস্থান নেই। রাত ৪টা পর্যন্ত চলে তাদের কার্যক্রম। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়েই তারা এই কাজ করে বলে জানান তিনি।
ছিনতাইকারীদের এমন উৎপাতে আতঙ্কিত দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ব্যবসায়ীরা। তারা অভিযোগ করেন, এদের ছিনতাই করার সময় বাধা দিলে অনেক সময় ছুরি দিয়ে আঘাত করে। তাছাড়া ছিনতাই করার সময় ব্যবসায়ীদের অনেকভাবে নাজেহাল করে। বিভিন্ন সময় পাথর দিয়ে ট্রাকের ওপরে বসা ব্যবসায়ীদের আঘাতও করে।
নরসিংদী থেকে সবজি নিয়ে আসা ব্যবসায়ী মো. জীবন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি রাতের ঘটনা এটা। কিন্তু এসব বন্ধে পুলিশের কোনো পদক্ষেপ দেখি না। তাদের সামনেই ঘটে এসব ঘটনা। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই না তারা সুযোগ পেলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা কিংবা মোবাইল ফোনও নিয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
এমএসি/আরআর